Sunday 20 March 2016

বিশ্ব সভ্যতায় নারী পর্ব এক। রোমান সভ্যতায় নারী: যৌতুকের ভয়ে মেয়েশিশুকে হত্যা করা হত। মেয়েকে দাস হিসেবে বিক্রি করতো ? ছিল না ভোটাধিকার !



সূফি বরষণ
প্রাচীন রোম পৃথিবীর সমৃদ্ধতম সভ্যতাগুলোর মধ্যে অন্যতম যা খ্রিষ্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর প্রথমভাগে ইতালীয় উপদ্বীপে সূচীত হয়। রোম শহরকে কেন্দ্র করে ভূমধ্যসাগরের তীর ধরে এই সভ্যতা বিকাশিত হতে থাকে, এবং কালক্রমে একটি প্রাচীন যুগের বৃহত্তম সাম্রাজ্যে পরিনত হয়।

এই সভ্যতার স্থায়ীত্বকাল ছিল প্রায় বারো শতক এবং এ দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় রোমান সভ্যতা একটি রাজতন্ত্র থেকে একটি সম্ভ্রান্ত প্রজাতন্ত্র এবং পর্যায়ক্রমে একটি একনায়কতন্ত্রী সাম্রাজ্যে পরিবর্তিত হয়। যুদ্ধ বিজয় এবং আত্তীকরণের মাধ্যমে এটি দক্ষিণ ইউরোপ,পশ্চিম ইউরোপ, এশিয়া মাইনর, উত্তর আফ্রিকা, উত্তর ইউরোপ এবং পূর্ব ইউরোপের একাংশকে এর শাসনাধীনে নিয়ে এসেছিল। রোম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী সাম্রাজ্য এবং প্রাচীন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সাম্রাজ্যগুলোর একটি ছিল। এটিকে প্রায়ই প্রাচীন গ্রিস সাথে একত্রে "উচ্চমানের পুরাতাত্বিক নিদর্শনের" মধ্যে দলবদ্ধ করা হয় এবং এদুটি সভ্যতার সাথে অনুরূপ সংস্কৃতি ও সমাজ মিলে একত্রে গ্রেকো-রোমান বিশ্ব হিসাবে পরিচিত। নর্ডিক জাতি কর্তৃক রোমান সভ্যতা ধ্বংস করা হয়।

রোম নগরীর পত্তন : আপেনাইন উপদ্বীপের মধ্যভাগে প্রবাহিত হয়েছে তির্বে (টাইবার) নদী- পার্বত্য অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে সমতলভূমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরে গিয়ে পড়েছে। সমতলভূমির ওপরে অনেক উঁচু উঁচু টিলা রয়েছে। প্রাচীনকালে এই সমভূমি ছিল জলাভূমি, আর টিলাগুলো ঘন বনজঙ্গলে আবৃত ছিল।

সমতলভূমিতে বসবাস করত লাতিন উপজাতি। তির্বে নদীর বাম পার্শ্ববর্তী টিলাগুলোর ওপরে, নদীমোহনা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে একটি ছোটখাটো শহর ছিল- রোম। কিংবদন্তি অনুযায়ী শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব ৮ম শতাব্দীর মধ্যভাগে। রোমের আদি অধিবাসীদের বংশধররা নিজেদের পরিচয় দিত পাত্রিৎসিউস্ বা পিতৃবংশীয় বলে। তারা চাষাবাদের জমি ও পশুচারণক্ষেত্রসহ নিজেদের গোষ্ঠী স্থাপন করে। পাত্রিৎসিউসদের প্রতিটি পরিবার (লাতিনে বলে ফামিলিয়া) গোষ্ঠীর ব্যবহার্য সাধারণ শস্যক্ষেত্রে নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে চাষ করত এবং গোষ্ঠীর সার্বজনীন পশুচারণক্ষেত্রে পশু চরাত।

পাত্রিৎসিউসরা সাধারণত নিজেরাই মাঠে বা বাড়িতে নিজেদের কাজকর্ম করত। মনিবদের সঙ্গে দাসরাও-এদের সংখ্যা অবশ্য খুবই কম ছিল- কাজ করত। দাসরা ‘ফামিলিয়ার’ অন্তর্ভুক্ত লোক হিসেবে পরিগণিত হতো; নিজেদের মনিবদের সঙ্গে এক পংক্তিভোজ্য হয়ে আহার পর্যন্ত তারা করতে পারত।

পাত্রিৎসিউসদের ঘরবাড়ি ছিল সাদামাটা এবং সাধারণ ধরনের। একটিমাত্র বিশেষ কামরার মাঝখানে জলাধার রেখে দেয়া হতো। এই কামরার ছাদে একটু চার কোনা জায়গা অনাচ্ছাদিত ফাঁকা থাকত এবং ওই ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির জল পড়ে জলাধারে জমা হতো। তাছাড়া ঘরের মধ্যে আলোও আসত ছাদের ওই ঘুলঘুলি দিয়ে।পাত্রিৎসিউসদের মধ্যে বয়োপ্রবীণরা মিলে গঠন করত ‘বুড়োদের পরামর্শসভা’- লাতিন ভাষায় সেনাতুস, অর্থাৎ সিনেট। রোমের শাসন পরিচালনা করতেন রোমের রাজা ও সিনেট। তথ্য সূত্র http://www.historyguide.org/ancient/lecture10b.html

কেমন ছিল রোমান নারী সমাজ:
আমরা এই আলোচনার শুরুতে সমৃদ্ধ রোমান সভ্যতার কথা বলেছি। বিশ্বসভ্যতায় এক বিস্ময়কর নাম রোমান সভ্যতা; সে গৌরবময় সভ্যতায় কেবল পুরুষেরই জয়জয়াকার । কিন্তু কেমন ছিল রোমান সভ্যতার নারীরা? কেমন ছিল তাদের জীবন? কীভাবে কাটত তাদের সময়? এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য আজ আমরা কৌতূহলী হয়ে উঠতেই পারি। আমাদের মনে রাখতে হবে একটি বিশেষ সময়ের, অর্থাৎ প্রথম শতাব্দী থেকে পঞ্চম শতাব্দী অবধি রোমান সভ্যতার নারীর জীবন পর্যালোচনা করা হয়েছে এই লেখায়। রোমান সভ্যতা দুই অংশে বিভক্ত। (ক) রোমান রিপাবলিক ও (খ) রোমান সাম্রাজ্য। খ্রিস্টপূর্ব ৫০৯ সালে রোমান রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে রোমান রিপাবলিকের পত্তন হয় এবং টিকে ছিল সুদীর্ঘ ৪৮২ বছর। খ্রিস্টপূর্ব ২৭ সালে রোমান রিপাবলিকের পতন হয় যখন রোমান সিনেট রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম শাসক জুলিয়াস সিজারকে অপরিমেয় ক্ষমতা প্রদান করে। তথ্য সূত্র http://www.historyguide.org/ancient/roman_res.html

প্রথমেই একটি বিষয় স্পষ্ট করে নিই। আমরা যাকে রোমান সভ্যতা বলছি, তা আসলে রোমকেন্দ্রীক অভিজাত নারীদের বিবরণ। আসলে রোমের নারীরাই রোমান সভ্যতার নারী এবং তাদের বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য নেই। কেননা, তৎকালীন রোমান সমাজটি ছিল পুরুষতান্ত্রিক আর তখনকার দিনে নারীদের ব্যক্তিগত বিবরণ লিখিত হত না। কাজেই, বৃহৎ রোমান সাম্রাজ্যের নারীদের জীবনের তথ্যাদি সুলভ নয়। এসব কারণে প্রাচীন রোমের নারীদের জীবন ঠিক কেমন ছিল এ বিষয়ে অনুমানের আশ্রয় নিতে হয়। একটু আগেই বললাম সমাজটি ছিল পুরুষতান্ত্রিক আর তখনকার দিনে নারীদের ব্যক্তিগত বিবরণ লিখিত হত না, উপরোন্ত নারীদের ইতিহাস লিখেছে পুরুষেরা ...এ কারণেই অনুমানের আশ্রয় নেওয়া। তবে সে অনুমান বলগাহীন অযৌক্তিক নয়। বাস্তবের সঙ্গে মিলিয়েই করা। যা হোক। তখনকার দিনে রোমান নারীদের ব্যক্তিগত বিবরণ লিখিত হত না বলে প্রাচীন রোমের নারীদের স্বপ্ন ও আশা সম্বন্ধে জানা সম্ভব না। তাদের সে রকম স্বপ্ন ও আশা ছিল কি না সন্দেহ। রাজনৈতিক বিষয়ে যুদ্ধ সংক্রান্ত , অভ্যূত্থান, দাসপ্রথা ও বিবাহ সম্পর্কে মেয়েরা কি ভাবত-সে ব্যাপারে জানার উপায় নেই। রোমান সভ্যতায় মেয়েদের নিজেদের ওপর ও সন্তানের ওপর আইনগত অধিকার ছিল না- এ বিষয়েও তারা কি ভাবত সে ব্যাপারে জানার উপায় নেই। তারপরও আমরা আজ কৌতূহলী হয়ে উঠেছি- রোমান সমাজে নারীদের ঠিক কি ভূমিকা ছিল।

অভিজাত রোমান নারীর  নিজের ওপর সন্তানের ওপর অধিকার না-থাকলেও নাগরিক বলে গন্য হত। এই প্রবন্ধের বিষয় মূলত অভিজাত রোমান নারী। তার কারণ আছে। তৎকালীন রোমান সমাজে শিক্ষার অধিকার ছিল কেবল অভিজাত শ্রেণির পুরুষদের । তারা তাদের অবসর সময়ে নিজস্ব অভিজ্ঞতাই লিখত। মেয়েদের প্রসঙ্গ এলে আত্মীয়স্বজনের কথা লিখত-যারা ছিল রোমান অভিজাত শ্রেণির । বলাবাহুল্য অভিজাত নারীরা রোমান সাম্রাজ্যের ক্ষুদ্র অংশ এবং অল্পবিস্তর হলেও এদের সম্বন্ধেই তথ্য পাওয়া যায়। যে কারণে এই লেখার শিরোনাম হওয়া উচিত 'প্রাচীন রোমের অভিজাত নারী'। দরিদ্র রোমান নারীদের সম্বন্ধে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। পাওয়া যাওয়ার কথাও না। তবে অভিজাত ও দরিদ্র মেয়েরা ভূমিকা একই - সন্তান ধারন। রোম নগরী বিশ্বসভ্যতায় এক বিস্ময়কর স্থান। আর রোমান সভ্যতা ছিলো রহস্যে ; সে গৌরবময় সভ্যতায় কেবল পুরুষেরই জয়জয়াকার অবস্থা ছিল । রোম সভ্যতায় নারী ছিল পুরুণের গৃহ সুসজ্জিত করার জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের অন্তর্ভুক্ত। তথ্য সূত্র https://en.m.wikipedia.org/wiki/Women_in_ancient_Rome

রোম প্রাচীন এ নগরের অভিজাত মেয়েরা ছিল কার্যত বন্দি।  রোমান সমাজের অভিজাত মেয়েদের বিয়ে হত ১২ বছর বয়েসে। কখনও কখনও আর কম বয়েসে। আধুনিক সময়ের ইউরোপীয় সমাজে এরকম ঘটনা যদিও কল্পনার বাইরে। তৎকালে রোমানদের গড় আয়ূ ছিল কম, কুড়ি কিংবা বড় জোড় তিরিশ। স্বীকার করছি বৃদ্ধ বয়েসে অনেকেই মারা যেত, তবে রোমানদের গড় আয়ূ ছিল বড় জোড় তিরিশ । একজন রোমান নারীর জীবনধারা ছিল এরকম: বিয়ে হত কম বয়েসে, মৃত্যু হত সন্তান জন্ম দানের সময় অথবা অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়। ভেতুরিনা নামে এক নারীর সমাধিলিপিতে লেখা আছে: ভেতুরিনার ১১ বছর বয়েসে বিয়ে হয়েছিল; সে ছিল ৬ সন্তানের জননী এবং তার মৃত্যু হয়েছিল ২৭ বছর বয়েসে। আয়ূর স্বল্পতার কারণে ক’জন শিশু বড় হবে বেঁচে থাকবে এটি নিশ্চিত ছিল না বলেই নারীকে গর্ভবতী হয়েই থাকতে হত। কর্লেনিয়া নামে এক অভিজাত রাজমাতার ছিল ১২টি সন্তান । অবশ্য মাত্র দুই ছেলে ও এক মেয়ে বেঁচে ছিল কর্লেনিয়ার । তথ্য সূত্র http://www.pbs.org/empires/romans/empire/women.html

অভিজাত পরিবারগুলি পুত্রসন্তান আশা করত। কারণ পুত্রসন্তানই বংশের নাম ও ধারা বজায় রাখতে পারে। রোমান পুরুষেরা চাইত তাদের স্ত্রীরা যেন গর্ভধারনে বিরতি না দেয়। বন্ধ্যাত্ব ছিল বিবাহবিচ্ছেদের অনিবার্য কারণ। তবে সে রকম ঘটনা ঘটলে মেয়েরাই বিবাহবিচ্ছেদের প্রস্তাব করত যাতে তাদের স্বামী অন্য কারও মাধ্যমে পিতৃত্বের অধিকার অর্জন করতে পারে। অবশ্য অভাবের কারণে দরিদ্রশ্রেণির নারীর অধিক সন্তান কাম্য ছিল না । পরিবারের ভরণপোষন করতে গিয়ে অধিক আয় করতে হত। এ কারণে দরিদ্রশ্রেণির রোমান মেয়েদের বাইরে কাজ করতে হত । বংশের বাতি জ্বালানোর জন্য তাদেরও স্বামীরা চাইত পুত্রসন্তান । পরিবারটির বাস গ্রামে হলে চাষাবাদের সাহায্যের জন্য পুত্রসন্তানই ছিল কাম্য, মেয়েরা তো ঐ কাজে দূর্বল! এরপরও রোমান সমাজের অভিজাত সমাজের সঙ্গে নিুবর্গের নারী তফাৎ ছিল। অভিজাত সমাজের নারীদের বাচ্চাকাচ্চা ছিল বেশি ।
 তথ্য সূত্র  http://www.pbs.org/empires/romans/empire/weddings.html

বন্ধ্যাত্ব ছিল বিবাহবিচ্ছেদের অনিবার্য কারণ। সন্তানের জন্ম দেবে কি দেবে না এ বিষয়ে রোমান অভিজাত নারীদের কোনও ভূমিকা ছিল না। স্বামী নবজাতককে (এই ক্ষেত্রে যদি নবজাতকটি কন্যাশিশু হয়) লালনপালন করতে না চাইলে স্ত্রীর সে বিষয়ে বলার কিছু ছিল না। কারণ, তৎকালে সন্তানের ওপর রোমান নারীর আইনগত অধিকার ছিল না। বিয়ের সময় যৌতুক দিতে হবে আবার বংশও রক্ষা করবে না এই অজুহাতে মেয়েশিশুকে হত্যা করা হত। এ কারণে রোমের জনসংখ্যা কমে গিয়েছিল। এই রকম পরিস্থিতিকে রোমান সম্রাট অগাস্টাস উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। আইন করে অবিবাহিত থাকাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গন্য করলেন। সেই সঙ্গে বিবাহ ও অধিক সন্তানের জন্মদানকে উৎসাহ দেওয়া হল। সূত্র http://travelswithnancy.com/women-ancient-rome/law-&-identity.htm

গ্রিসের মেয়েদের তুলনায় রোমান নারীদের অবস্থান ছিল ভালো। গ্রিসের নারীরা নাগরিক ছিল না। রোমের নারীরা নাগরিক ছিল না এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। মেয়েদের পুরুষের অধীন বন্দি করে রাখার নানান প্রথা ছিল রোমান সমাজে। রোমান মেয়েদের নিজস্ব নাম থাকত না। তারা বাবার নামের মধ্যাংশ ব্যবহার করত। তবে সেটিকে স্ত্রীবাচক করে নিতে হত। মেয়েদের নাম শুনেই বোঝা যেত মেয়েটির বাবা কে এবং কী তার সামাজিক মর্যাদা। মেয়েরা পরিবারেই ভিতরেই থাকত এবং তার আলাদ কোনও পরিচয় ছিল না। সূত্র http://www.moyak.com/papers/roman-women.html

মেয়ের ওপর বাবার ছিল নিরুঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, বাবা ইচ্ছে করলে এমন কী মেয়েকে দাস হিসেবে বিক্রি করতে পারত কিংবা মেয়ের বিবাহবিচ্ছেদ কার্যকর করতে পারত। সন্তান থাকলেও সেই সন্তানকে ফেলে আসতে হত। সন্তানের ওপর রোমান নারীর বৈধ অধিকার ছিল না কখনও ওদের দেখতেও পেত না। বিয়ের সময় মেয়ের সম্পদের ওপর অধিকার ছিল বাবার, মানে মেয়েরা পৈত্রিক সম্পত্তি শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে পারত না।
পুরুষের অধীনে নারীদের বন্দি করে রাখার নানা প্রথা ছিল রোমান সমাজে।তথ্যসূত্র http://www.ancient.eu/article/659/

 সেকালে অভিজাত রোমান নারীরা কেবল সন্তান ধারনের ‘যন্ত্র’ ছিল না। সন্তানের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করত। শিশুদের রোমানসংস্কৃতি শিক্ষা দেওয়ার জন্য নারীদের উৎসাহ দেওয়া হত । মেয়েশিশুদেরও শিক্ষা লাভের সুযোগ ছিল; কেননা তারাও পরবর্তীকালে সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে। পুত্রসন্তান বড় হলে রাজনীতে অবতীর্ণ হওয়া ছিল বাধ্যতামূলক। এ জন্য মায়েরা তাদের ছেলেদের পিছনে অর্থসম্পদ ব্যয় করত। তবে ‘ওপিয়ান ল’ নামে একটি আইন হয়েছিল। যে আইন অনুযায়ী  মেয়েরা ভোগ্যপন্য -যেমন অলঙ্ককার কিনতে পারত না। এর কারণ ছিল যুদ্ধের ব্যয় মেটানো। অবশ্য ১৯৫ খ্রিস্টপূর্বে অর্থাৎ আইনটি প্রনয়নের ২০ বছর পর তা বাতিল হয়ে যায়। সূত্র http://quatr.us/romans/people/romanwomen.htm

 ১৯৫ খ্রিস্টপূর্বের পর অধিবেশ চলাকালে রোমান নারীদের রোমান ফোরামে দেখা গেল। এমন কী নির্বাচনের আগে ভোট দেওয়ার জন্য আত্মীয়দের পক্ষে প্রচারনা চালায়। তৎকালীন এক লেখক লিখেছেন ...এটা কি ধরনের কথা! রাস্তা আটকিয়ে মেয়েরা পরপুরুষের কাছে ভোট চাইবে!

তা সত্ত্বেও রোমান মেয়েদের ব্যাক্তিস্বাধীনতা ছিল না। তাদের গতিবিধির ওপর বাবা কিংবা পুরুষ আত্মীয় কিংবা স্বামী নজর রাখত। মাঝে-মাঝে মেয়েদের মুখের গন্ধ শুঁকত। দেখত মদ খেয়েছে কিনা । রোমান সমাজে মেয়েদের মদ্যপান নিষিদ্ধ ছিল। মদ্যপানের শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড। রোমান পুরুষরা মনে করত মদ মেয়েদের পরকীয়ায় উৎসাহিত করবে। তবে রোমান সমাজের অভিজাত স্তরে পরকীয়ার ঘটনা ঘটত। কেননা, বিয়েগুলি হত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উদ্দেশে, সেখানে প্রেম বলে কিছু ছিল না। রোমান মেয়েদের কখনও মেয়েদের বেশি বয়েসের লোকের সঙ্গে বিয়ে হত। আসলে যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করা হত একজন রোমান মেয়েকে বিয়ে তাকেই করতে হত। সূত্র http://www.bbc.co.uk/history/ancient/romans/roman_women_01.shtml

পরকীয়া জানাজানি হলে পুরুষকে কিছু না বললেও মেয়েটিকে মেরে ফেলা হত! রোমান পাবলিক বাথ। রোমান সমাজের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র। রোমান পাবলিক বাথ-এ মেয়েরাও স্নান করত। কেননা, রোমান জনস্নানাগারটি সব বয়েসের সামাজিক শ্রেণি ও লিঙ্গে জন্য ছিল উন্মুক্ত। কখনও কখনও মেয়েদের আলাদা স্নানাগার ছিল । তা না হলে মেয়েরা সকালে ছেলেরা বিকালে স্নান করতে যেত।

রোমান ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মেয়েরা যোগ দিতে পারত। নাগরিক স্নান ও সামাজিক ডিনার পার্টি ছিল উচ্চবিত্ত রোমানদের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ডিনার পার্টিতে মেয়েরা স্বামীদের সঙ্গে থাকত। মেয়েরা এম্পিথিয়েটারেও যেত। সেখানে গ্লাডিয়েটরএর যুদ্ধ ও সার্কাস অনুষ্টিত হত। এমন কী নারী গ্লাডিয়েটর সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তবে নাট্যমঞ্চে তাদের দেখা যেত না।

অবশ্য কোনও কোনও রোমান নারী অন্যদের চেয়ে শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর ছিল, তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও ছিল বেশি। সার্বিক বিচারে রোমান সভ্যতায় রোমান নারীদের ভূমিকা ছিল বহুমূখী। একাধারে সন্তান ধারণ, মা, কন্যা ও স্ত্রীর ভূমিকা। নারীদের রোমান নাগরিক মনে করা হত ঠিকই তবে ভোটাধিকার ছিল না। রাজনীতিতেও অংশ নিতে দেওয়া হত না। অবশ্য কোনও কোনও রোমান নারী অন্যদের চেয়ে শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রসর ছিল, তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতাও ছিল বেশি। দরিদ্র রোমান মেয়েরা সংসার টিকিয়ে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করত, অপরদিকে উচ্চবিত্ত মেয়েরা পরিবারের পুরুষ সদস্যের ইচ্ছে পূরণ করত। মনে থাকার কথা ... রোমান মেয়েদের কখনও মেয়েদের বেশি বয়েসের লোকের সঙ্গে বিয়ে হত। আসলে যার সঙ্গে বিয়ে ঠিক করা হত একজন রোমান মেয়েকে বিয়ে তাকেই করতে হত। রোমান মেয়েদের নিজস্ব স্বাত্যন্ত্রটুকু ছিল না। এমন কী পছন্দসই নামও নিতে পারত না। সে যুগে ক্রমাগত যুদ্ধবিগ্রহের ফলে জীবন কারও জন্যই সুখকর ছিল না। তবে নারীর জীবন যে দুঃস্থ এবং অসুখি ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।  সূত্র http://historylink101.com/2/Rome/roman-women.htm

সন্তানের জন্ম দেবে কি দেবে না এ বিষয়ে রোমান অভিজাত নারীদের কোনো ভূমিকা ছিল না। স্বামী নবজাতককে (এই ক্ষেত্রে যদি নবজাতকটি কন্যাশিশু হয়) লালনপালন করতে না চাইলে স্ত্রীর সে বিষয়ে বলার কিছু ছিল না। কারণ,  সন্তানের ওপর রোমান নারীর আইনগত অধিকার ছিল না। বিয়ের সময় যৌতুক দিতে হবে আবার বংশও রক্ষা করবে না এই অজুহাতে মেয়ে শিশুকে হত্যা করা হতো। এ কারণে রোমের জনসংখ্যা কমে গিয়েছিল। এই রকম পরিস্থিতিকে রোমান সম্রাট অগাস্টাস উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন। আইন করে অবিবাহিত থাকাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ
বলে গণ্য করলেন। সেই সঙ্গে বিবাহ ও অধিক সন্তানের জন্মদানকে উৎসাহ দেয়া হলো। সূত্র http://www.ancient.eu/books/8849226918/

মেয়ের ওপর বাবার ছিল নিরুঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ, বাবা ইচ্ছে করলে এমন কী মেয়েকে দাস হিসেবে বিক্রি করতে পারত কিংবা মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর করতে পারত। সন্তান থাকলেও সেই সন্তানকে ফেলে আসতে হতো। সন্তানের ওপর রোমান নারীর বৈধ অধিকার ছিল না কখনো ওদের দেখতেও পেত না। বিয়ের সময় মেয়ের সম্পদের ওপর অধিকার ছিল বাবার, মানে মেয়েরা পৈত্রিক সম্পত্তি শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যেতে পারত না।
তবে অভিজাত রোমান নারীরা কেবল সন্তান ধারনের ‘যন্ত্র’ ছিল না। সন্তানের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত। শিশুদের রোমানসংস্কৃতি শিক্ষা দেয়ার জন্য নারীদের উৎসাহ দেয়া হতো। মেয়ে শিশুদেরও শিক্ষা লাভের সুযোগ ছিল; কেন না তারাও পরবর্তীকালে সন্তানের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেবে। সূত্র  http://www.the-romans.co.uk/women.htm

১৯৫ খ্রিস্টপূর্বের পর অধিবেশ চলাকালে রোমান নারীদের রোমান ফোরামে দেখা যায় এমন কী নির্বাচনের আগে ভোট দেয়ার জন্য আত্মীয়দের পক্ষে প্রচারণা চালায়। তৎকালীন এক লেখক লিখেছেন এটা কি ধরনের কথা! রাস্তা আটকিয়ে মেয়েরা পরপুরুষের কাছে ভোট চাইবে!
তা সত্ত্বেও রোমান মেয়েদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ছিল না। তাদের গতিবিধির ওপর বাবা কিংবা পুরুষ আত্মীয় কিংবা স্বামী নজর রাখত। মাঝে মাঝে মেয়েদের মুখের গন্ধ শুঁকত। দেখত মদ খেয়েছে কি না। রোমান সমাজে মেয়েদের মদ্যপান নিষিদ্ধ ছিল। মদ্যপানের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ড। তথ্য সূত্র http://www.pbs.org/empires/romans/empire/family.html

এবার একটু অন্য আলোচনা, অনেক বছর আগে ট্রয় নামে একটি দেশ ছিলো। সেই দেশের নামকরা এক যোদ্ধার নাম ছিলো হেক্টর। রোমান সভ্যতা তখনো গড়ে ওঠেনি, ট্রয় ছিলো সমৃদ্ধশালী একটি নগর, যার চারপাশে ছিলো দুর্ভেদ্য প্রাচীর। গ্রিক সুন্দরী হেলেনকে নিয়ে ট্রয় আর গ্রিসের মধ্যে একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়। সেই যুদ্ধে পরাজিত হয় ট্রয়বাসী। গুঁড়িয়ে দেয়া হয় তাদের নগরী।
ট্রয় ধ্বংস হওয়ার পর ট্রোজানরা, যারা যুদ্ধে বেঁচে ছিলো তারা পাড়ি জমায় ইতালিতে। তাদের নেতা ছিলেন ভেনাসপুত্র ঈনিয়াস। ভেনাসকে গ্রিকরা চেনে আফ্রোদিতি হিসেবে। স্বর্গের রাজা জিউস তার পিতা। ঈনিয়াসের বংশধররা সেখানে অ্যালবালঙ্গা নগরীর পত্তন করেন। এই বংশধরদের একজন হলেন নুমিটর।

নুমিটর ছিলেন এক ন্যায়বিচারক, কিন্তু তার সহোদর আমুলিয়াস ছিলেন হিংসুটে, স্বার্থপর। তিনি সারাক্ষণ নুমিটরের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে মত্ত থাকতেন। সিংহাসনের জন্য করতে পারতেন না এমন কোনো কাজ ছিলো না। আমুলিয়াস এক সময় তার ভাইকে হটিয়ে নিজে সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসন নিশ্চিত করতে তিনি হত্যা করেন আপন ভ্রাতুষ্পুত্রকে। ভাতিজি রিয়া সিলভিয়াকে হত্যা না করে যাবজ্জীবন সাজা দেন। ভেস্ট দেবীর মন্দিরে পুজারিণী পদে জোরপূর্বক নিযুক্ত হন রিয়া সিলভিয়া।
রিয়া কখনো কাউকে বিয়ে করে সংসারী হবে না—এমন শপথ করতে হয়। এই শপথ ভঙ্গ করার শাস্তি মৃত্যু। আমুলিয়াস এভাবেই তার সিংহাসন কণ্টকমুক্ত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রণদেবতা মার্স রিয়া সিলভিয়াকে ভালোবেসে বিয়ে করেন। অচিরেই রিয়া জন্ম দেন দু’টি যমজ সন্তানের। রোমের ইতিহাসে এই দুই বালক রোমুলাস ও রেমাস নামে পরিচিত।

ভাতিজির মা হওয়ার সংবাদে আমুলিয়াস অত্যন্ত রেগে গিয়ে রিয়া সিলভিয়াকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তার দুই শিশুপুত্রকে আমুলিয়াসের নির্দেশে প্রহরীরা চেষ্টা করে সমুদ্রে নিক্ষেপ করতে। একটি কাঠের বাক্সে শিশু দুটিকে ভরা হয়। সেই সময় টাইবার নদী বর্ষার পানিতে ফুলে ফেঁপে উঠেছিলো। ভাসিয়ে নিয়েছিলো কৃষকের ক্ষেত, গ্রামের পর গ্রাম। প্রহরীরা ঠিক করে এই নদীতেই শিশু দুটিকে নিক্ষেপ করবে।
প্রহরীরা শিশু দুটিকে নদীতে ছুড়ে মারে। রণদেবতা মার্স সঙ্গে সঙ্গেই শিশু দুটিকে রক্ষা করেন। মার্সের নির্দেশে টাইবার নদী শান্ত স্রোতস্বিনী রূপ ধারণ করে শিশু দুটিকে তীরে পৌঁছে দেয়। একটি নেকড়ে সেই কাঠের বাক্সটি দেখতে পায়। বাক্সের ভেতরে ক্রন্দনরত শিশু দেখে নেকড়ের মায়া হয়। নেকড়েটি ক্ষিদের জ্বালা ভুলে শিশু দুটি দেখাশোনা করে। নেকড়ের দুধ পান করে শিশু দুটো রীতিমত হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠে। শুধু নেকড়ে নয় বনের পাখিরাও তাদের রুটির টুকরো খাইয়ে যেত নিয়মিত। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছিল।
একদিন ফস্টুলাসনামে এক মেষপালক বনের মাঝে শিশু দুটির সন্ধান পেয়ে নিয়ে আসে নিজের বাড়িতে। মেষপালক আর তার স্ত্রীর পরম মমতায় বেড়ে ওঠে রোমুলাস ও রেমাস। রোমুলাস আর রেমাসের রক্তে বীরের রক্ত প্রবাহিত। শৌর্যে-বীর্যে তারা ছিলো রাজপরিবারের যোগ্য উত্তরসূরি।
সেই সময় ডাকাতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় রোমুলাস ও রেমাস মেষপালকদের নিয়ে গঠন করে একটি প্রতিরোধ বাহিনী, যারা ডাকাতদের শায়েস্তা করতো। ডাকাতদের হত্যা করে লুণ্ঠিত সম্পদ তাদের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেয়াই ছিল তাদের কাজ।

দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে এই দুই বীরের নাম। এদিকে ডাকাতরা দুই ভাইয়ের ক্ষতি সাধনের জন্য এক ফন্দি বের করে। তাদের সেই চক্রান্তের শিকার হয়ে রেমাসকে রাজার ভাই নুমিটরের মেষ শাবক চুরির দায়ে হাজতে পাঠানো হয়। রোমুলাস পালিয়ে বেঁচে ছিলো। কারারুদ্ধ রেমাসকে দেখে নুমিটরের মনে সন্দেহ জাগে এই তার হারিয়ে যাওয়া নাতীদের একজন। রেমাসের মুখে তাদের মেষ পালকের জীবন, টাইবার নদীতে তাদের গল্প শুনে নুমিটর নিশ্চিত হয় তার সন্দেহ সম্পর্কে। রেমাস আর রোমুলাস দু’জনই তাদের রাজপরিচয় পায়। দুই ভাই এবার তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য দায়ী ব্যক্তি আমুলিয়াসকে পরাস্ত করতে গড়ে তোলে এক বিশাল সেনাবাহিনী। তাদের বাহিনী দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে অতর্কিত আক্রমণ করে আমুলিয়াসের বাহিনীকে পরাজিত করে। নুমিটরের বংশধররা পুনরায় শাসনভার গ্রহণ করেন।
লেখায় এবং খামের উপর কোথাও তোমার নাম লিখোনি। তবে লেখাটি ভালো লাগলো বলে ছেপে দেয়া হলো। এই লেখাটি যে লিখেছো আমাদের তোমার নাম জানাবে।

মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ


No comments:

Post a Comment