তনু আমার বোন, আর আপনার ........?
সূফি বরষণ
সন্দ্বীপের ছেলে মনির লন্ডন থাকে । কাছের ছোটো ভাই অত্যন্ত ভদ্র শান্তশিষ্ট, কিন্তু আবেগ প্রবণ নয় খুবই বাস্তববাদী। গতকাল সন্ধ্যায় সে আমাকে ফোন করে হাউ মাউ সুরে কান্নাকাটি শুরু করে, প্রথমে আমি থ হয়ে যায়, পরে আমি বলি ক্রিকেট খেলার এক রানের জন্য বাংলাদেশ হারার কারণে কি কান্নাকাটি করছিস??। সে আমাকে বলে বরষণ ভাই আই ক্রিকেট খেলার লাই ন কাঁদি!? আপনি নিউজ পড়েননি তনু নামে এক ছাত্রীকে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় অপরদিকে শিল্পী কৃষ্ণকলির বাসার কাজের মেয়ে শিল্পীকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এভাবে প্রতিদিন তনু শিল্পীদের পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে । এই দেশ ও সমাজের কি হলো???
এই দেশ এই সমাজ তো এমন ছিলনা ?। যে দেশের সন্তানেরা তাদের মায়ে জাঠরের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারে না সেই দেশ সেই সমাজের পাপের দায়ে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। মনির বলে আজ তনু কাল শিল্পী পরশু আপনার এবং আমার বোন নয় কি?? একটি সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারেনা? এভাবে চলতে দেয়া যায়না। একটি রাষ্ট্রে যখন গণতান্ত্রিক সরকার থাকেনা সেখানে এমনিতেই আইনের শাসন থাকে না। সমাজে আইনের শাসন না থাকলে তনুর মতো আমার আপনার বোন কন্যা স্ত্রী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্থান সেনানিবাসেও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে এটা এখন বাংলাদেশের স্বাভাবিক চিত্রে রূপলাভ করেছে। যেখানে নির্বাচনের নামক তামাশার মাধ্যমে জনগণের অর্থে জনগণকে হত্যার মহা আয়োজন মঞ্চস্থ করা হয়??
যেখানে পুলিশ খেফাজতে বছরে কম করে হলেও ২৫০ জন নাগরিককে হত্যা সেখানে তনুর মতো ঘটনা ঘটবেই!??? কিন্তু এভাবে আর কতদিন ঘটতে দেয়া যায়?? এখানেই সব বন্ধ করা উচিত আর সহ্য করা যায় না অনেক হয়েছে ।
সবকিছু আজ নষ্টদের অধিকারে। তাই বলে এতোটা। এতো বর্বর হয়ে গেছে মানুষ। এরচেয়েও দুঃখজনক হচ্ছে বর্বরতার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ নেই। কোথাও কোন দ্রোহ নেই। ফেসবুকে দুই, চারটি স্ট্যাটাস। তারপরই খেল খতম। নাকে তেল দিয়ে ঘুম যাওয়া। কারণ আগামীকাল আবারও সরকার জনগণের সামনে নতুন ইসু নিয়ে হাজির হবে তখন আমার তনু শিল্পী দিপালীদের ভুলে যাব আর কোনো দিন এদের বর্বর হত্যা বিচার হয়না ??
নগর সমাজ ক্রমশ তরুণদের মেরে ফেলেছে। তাদের শরীর বেঁচে থাকলেও আত্মা মরে যায়। বাংলাদেশের তারুণ্য আজ সেই বিকারের শিকার। তারা এখন গার্লফেন্ডদের সাথে কুকুরের মতো লম্বা জিহ্বা বের করে সেলফি তোলা নিয়ে ব্যস্ত তাই চেতনা এখন সেলফি পর্যন্তই। তরুণরা এখন দেশ প্রেমিক নাগরিক বা সমাজ কর্মী থেকে নিজেকে ডিজে হিসেবে পরিচয় দিতে সম্মানবোধ করে । আর ফেবুতে পোস্ট আপডেট করে।
অথচ কে না জানে এদেশে যা কিছু ঐতিহাসিক তার নেতৃত্বে ছিল তরুণরা। বৃদ্ধ আর নেতারা যখন শরনার্থী ছিলেন তখন ক্র্যাকপ্লাটুনের তরুণ গেরিলারা পাক সেনাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের চালিকা শক্তি ছিলেন কারা? সেই তারুণ্য আজ কোথায়।
সোহাগী জাহান তনু। একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রথম খবরটি নজরে আসে। হঠাৎ মনে পড়ে যায় আমার বোনদের কথা। মনে হয়, মেয়েটিতো আমার বোনও হতে পারতো। আমার বোনও তনু মতো হিজাব পড়ে সমাজ কর্মী হিসেবে কাজ করে। তনুর অবস্হার কথা মনে করে আমার মন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে কারণ আমারও দুটি বোন আছে। আশ্চার্য হই কোথাও তনুর হত্যার এ খবর তেমন কোন তোলপাড় তোলে না। ঝানু সম্পাদকরা গুরুত্ব দিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ করেন না। কিন্তু কেন?
অসহ্য বর্বর বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া। নাকি আমাদের অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে আজ। অপরদিকে একই সময়েই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলির বাসার গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলির স্বামী খালিকুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
তনু নামক আমার বোনটি বড় হতে চেয়েছিল। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এগুতে হচ্ছিল লড়াই করে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নির্মম সত্য হলো এখন লিখতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ছিল। টিউশনি করে এগিয়ে নিচ্ছিল নিজের পড়ালেখা। গত রোববার সন্ধ্যায় অলিপুর এলাকায় প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বাসা থেকে বের হয়। না সে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত ১১টার দিকে তার লাশ পাওয়া যায়। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাষ্য, নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মাথার কিছু ছেঁড়া চুল লাশের পাশে পড়েছিল। তাকে ধর্ষণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তনুরা মরে যায়। তাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ফেসবুকে এর প্রতিবাদে দুই, চারটি স্ট্যাটাস লেখা হয়। রাজনীতিবিদরা এ ব্যাপারে মুখ খোলেন না। ক্ষমতার হিসাব না থাকায় চুপ থাকেন নাগরিক সমাজ। দুই/এক দিন মানববন্ধন হয়। মিডিয়ায় এই সংবাদ কোন প্রচার পায় না। একটি পরিবারের স্বপ্ন মরে যায়।
এই কি সেই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে টিভি চ্যানেল খুললেই উন্নয়নের গল্প। পরিচিত সব মুখ প্রতিদিন। বাংলাদেশ নাকি এগিয়ে যাচ্ছে। এই কি তবে এগিয়ে যাওয়া। পূর্ণিমার কথা মনে আছে। মনে আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন নিপীড়নের শিকার বীরঙ্গনাদের কথা।
তাহলে এতো ত্যাগ, এতো সংগ্রামের কি মূল্য থাকলো। তনুরা যদি ধর্ষিতা হয়, যদি তার লাশ পড়ে থাকে জঙ্গলে তো এ কেমন স্বাধীনতা। এ কেমন বাংলাদেশ। এ কেমন উন্নয়ন। এই কি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ।
তনুদের জন্য যদি কেউ না দাঁড়ায়, যদি কোন প্রতিবাদ না হয়। তবে অপেক্ষা করুন। ফের এমন খবর পাবেন। দুই একদিন হয়তো আমাদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসবে। আমরা আবার ভুলে যাবো। আমাদের ক্ষমা করো তনু। তবে আমাদের অক্ষমতাকে ক্ষমা করো না। আমাদের অভিশাপ দাও। এই অভিশাপে পুড়ে চারখার হয়ে যাই আমরা।
একজন মেধাবী ছাত্রী তনুকে যেভাবে হত্যা করা হলো…. আমরা সেই খবরটি প্রথম দিকে কোন মিডিয়াতেই দেখতে পেলাম না। এই বর্বর হত্যার ঘটনা দামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে সে হিজাবধারী ছিল বলে কি? বা তার প্রকৃত কারন কি এখনো জানিনা। মানুষ কতটা বর্বর, বিকারগ্রস্থ ও নষ্ট হয়ে গেলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে তার নজির তনুকে ধর্ষন শেষে নৃসংশ ভাবে হত্যা করাই বড় প্রমান। যারা এ ঘটনার কোন প্রতিবাদ না করে চুপ করে বসে আছে ধিক্কার জানাই তাদের। আজকে যদি তনু বড়লোকের কোন মেয়ে হতো, যদি কোন নেতার মেয়ে হতো কিংবা কোন কোন মঞ্চের কর্মী হতো তাহলে সারাদেশে কি আস্ফালন হতো তা না বলাই ভালো। তবে এটুকু বলতেই চাই, কোথায় আজ মানবাধিকার নামধারী বুদ্ধিবেশ্যা নেতা-নেত্রীরা। যারা অল্প কিছুতেই দেশে ঝড় তোলেন। রাস্তায় নেমে মিডিয়ার সামনে বড় গলায় কথা বলেন।
কোথায় সেই সব সবজান্তা মানুষ গুলো, যারা ‘টক-শো’তে বসে জাতীকে জ্ঞান বিতরন করেন। কোথায় সেই নেতা-নেত্রীরা যারা একে অপরের বিরুদ্ধে কথার ‘খই’ ফোটান। বিবেকের কাঠগড়ায় আজ তাদের দাঁড়াবার সময় এসেছে। আমরা যারা সাধারন মানুষ তাদের করবার কিইবা আছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ কিংবা কিছু লেখালেখি। আজকে আমার এ বোনটিতে যেভাবে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হলো…. এর দায় কে নেবে। আক্ষেপের সুরে বলতেই হয়- কি হবে বিচার চেয়ে। কার কাছে বিচার চাইবো। যার কাছে বিচার চাইবো, যারা বিচার করবেন সেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিংবা রাজনৈতিক নেতারাইতো ঔইসব জানোয়ারদের রক্ষক।
তনু বোন আমার… তোমার উপর যারা এমন নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে তাদের বিচার হয়তো আমরা করতে পারবোনা। কিন্তু বোনটি তুমি শান্তিতে ঘুমাও…. আর পারি আর না পারি, তোমার আত্মার শান্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়াতো করতে পারবো।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু’র হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানবাধিকার সংগঠন ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিস লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে ২৫ মার্চ শুক্রবার ১:৪০ এ মানব বন্ধনের আয়োজন করেছে । নিম্নের কিছু প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রশাসনকে অনুরোধ করে আমাদের এই মানববন্ধন --
১) হত্যার বিষয়ে সোহাগীর পরিবার যেন কোনো তথ্য দিতে না পারে, সেজন্য তাদের নজরদারি রাখা হয়েছে। বন্ধ করে রাখা হয় তাদের মোবাইল ফোন। এবং সেনা কর্মকর্তারা তনুর পরিবারের সব সদস্যের ফোন নিয়ে যায় কেন? এর কারণ কি?
২) সকালে সোহাগীর সহপাঠীদের সেই বাসায় প্রথমে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, পরবর্তীতে জোরাজুরিতে বিস্তারিত পরিচয় নিয়ে মাত্র অল্প কয়েকজনকে যেতে দেয়া হয়েছে, এর কারণ কি?
৩) ক্যান্টনম্যান্ট এলাকার ভেতরে এরকম একটা ঘটনা ঘটলো তারপর সেই অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কাউকে কি গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে? না করা হয়ে থাকলে কেন করা হয়নি ?
৪) কেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে আইএসপিআর কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেয়া হচ্ছে না সার্বিক পরস্থিতি নিয়ে?
৫) কেন টেলিভিশন মিডিয়া রিপোর্ট করছে না কিংবা করতে পারছে না?
৬) ভিক্টোরিয়া কলেজে হয়ে যাওয়া হাজারো ছাত্রের প্রতিবাদ সমাবেশের খবর কেন মিডিয়া কভারেজ পাচ্ছে না?
৭) রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিল, সেনানিবাসকে আইনের আওতায় আনার ষড়যন্ত্র, সানি তাকসিন এবং সীমাহীন ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা গুলোকে দামাচাপা দিতে কি এই তনুর হত্যাকান্ড ??? বাকী উত্তর জিজ্ঞাসা আপনাদের কাছে একটু ভাবুন চিন্তা করুন কোথায় বল মেরে কোথায় গোপন কি করা হচ্ছে ।
মুক্ত বুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
সূফি বরষণ
সন্দ্বীপের ছেলে মনির লন্ডন থাকে । কাছের ছোটো ভাই অত্যন্ত ভদ্র শান্তশিষ্ট, কিন্তু আবেগ প্রবণ নয় খুবই বাস্তববাদী। গতকাল সন্ধ্যায় সে আমাকে ফোন করে হাউ মাউ সুরে কান্নাকাটি শুরু করে, প্রথমে আমি থ হয়ে যায়, পরে আমি বলি ক্রিকেট খেলার এক রানের জন্য বাংলাদেশ হারার কারণে কি কান্নাকাটি করছিস??। সে আমাকে বলে বরষণ ভাই আই ক্রিকেট খেলার লাই ন কাঁদি!? আপনি নিউজ পড়েননি তনু নামে এক ছাত্রীকে পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয় অপরদিকে শিল্পী কৃষ্ণকলির বাসার কাজের মেয়ে শিল্পীকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। এভাবে প্রতিদিন তনু শিল্পীদের পাশবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হচ্ছে । এই দেশ ও সমাজের কি হলো???
এই দেশ এই সমাজ তো এমন ছিলনা ?। যে দেশের সন্তানেরা তাদের মায়ে জাঠরের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারে না সেই দেশ সেই সমাজের পাপের দায়ে তাদের ধ্বংস অনিবার্য। মনির বলে আজ তনু কাল শিল্পী পরশু আপনার এবং আমার বোন নয় কি?? একটি সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারেনা? এভাবে চলতে দেয়া যায়না। একটি রাষ্ট্রে যখন গণতান্ত্রিক সরকার থাকেনা সেখানে এমনিতেই আইনের শাসন থাকে না। সমাজে আইনের শাসন না থাকলে তনুর মতো আমার আপনার বোন কন্যা স্ত্রী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার স্থান সেনানিবাসেও পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে এটা এখন বাংলাদেশের স্বাভাবিক চিত্রে রূপলাভ করেছে। যেখানে নির্বাচনের নামক তামাশার মাধ্যমে জনগণের অর্থে জনগণকে হত্যার মহা আয়োজন মঞ্চস্থ করা হয়??
যেখানে পুলিশ খেফাজতে বছরে কম করে হলেও ২৫০ জন নাগরিককে হত্যা সেখানে তনুর মতো ঘটনা ঘটবেই!??? কিন্তু এভাবে আর কতদিন ঘটতে দেয়া যায়?? এখানেই সব বন্ধ করা উচিত আর সহ্য করা যায় না অনেক হয়েছে ।
সবকিছু আজ নষ্টদের অধিকারে। তাই বলে এতোটা। এতো বর্বর হয়ে গেছে মানুষ। এরচেয়েও দুঃখজনক হচ্ছে বর্বরতার বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ নেই। কোথাও কোন দ্রোহ নেই। ফেসবুকে দুই, চারটি স্ট্যাটাস। তারপরই খেল খতম। নাকে তেল দিয়ে ঘুম যাওয়া। কারণ আগামীকাল আবারও সরকার জনগণের সামনে নতুন ইসু নিয়ে হাজির হবে তখন আমার তনু শিল্পী দিপালীদের ভুলে যাব আর কোনো দিন এদের বর্বর হত্যা বিচার হয়না ??
নগর সমাজ ক্রমশ তরুণদের মেরে ফেলেছে। তাদের শরীর বেঁচে থাকলেও আত্মা মরে যায়। বাংলাদেশের তারুণ্য আজ সেই বিকারের শিকার। তারা এখন গার্লফেন্ডদের সাথে কুকুরের মতো লম্বা জিহ্বা বের করে সেলফি তোলা নিয়ে ব্যস্ত তাই চেতনা এখন সেলফি পর্যন্তই। তরুণরা এখন দেশ প্রেমিক নাগরিক বা সমাজ কর্মী থেকে নিজেকে ডিজে হিসেবে পরিচয় দিতে সম্মানবোধ করে । আর ফেবুতে পোস্ট আপডেট করে।
অথচ কে না জানে এদেশে যা কিছু ঐতিহাসিক তার নেতৃত্বে ছিল তরুণরা। বৃদ্ধ আর নেতারা যখন শরনার্থী ছিলেন তখন ক্র্যাকপ্লাটুনের তরুণ গেরিলারা পাক সেনাদের ঘুম হারাম করে দিয়েছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের চালিকা শক্তি ছিলেন কারা? সেই তারুণ্য আজ কোথায়।
সোহাগী জাহান তনু। একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রথম খবরটি নজরে আসে। হঠাৎ মনে পড়ে যায় আমার বোনদের কথা। মনে হয়, মেয়েটিতো আমার বোনও হতে পারতো। আমার বোনও তনু মতো হিজাব পড়ে সমাজ কর্মী হিসেবে কাজ করে। তনুর অবস্হার কথা মনে করে আমার মন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে কারণ আমারও দুটি বোন আছে। আশ্চার্য হই কোথাও তনুর হত্যার এ খবর তেমন কোন তোলপাড় তোলে না। ঝানু সম্পাদকরা গুরুত্ব দিয়ে এই সংবাদ প্রকাশ করেন না। কিন্তু কেন?
অসহ্য বর্বর বাস্তবতাকে মেনে নেওয়া। নাকি আমাদের অনুভূতি ভোতা হয়ে গেছে আজ। অপরদিকে একই সময়েই জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলির বাসার গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় কণ্ঠশিল্পী কৃষ্ণকলির স্বামী খালিকুর রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
তনু নামক আমার বোনটি বড় হতে চেয়েছিল। দরিদ্র পরিবারের সন্তান। এগুতে হচ্ছিল লড়াই করে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। নির্মম সত্য হলো এখন লিখতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ছিল। টিউশনি করে এগিয়ে নিচ্ছিল নিজের পড়ালেখা। গত রোববার সন্ধ্যায় অলিপুর এলাকায় প্রাইভেট পড়ানোর জন্য বাসা থেকে বের হয়। না সে আর ফিরে আসেনি। অনেক খোঁজাখুঁজির পর রাত ১১টার দিকে তার লাশ পাওয়া যায়। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুনের ভাষ্য, নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মাথার কিছু ছেঁড়া চুল লাশের পাশে পড়েছিল। তাকে ধর্ষণের পর নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
তনুরা মরে যায়। তাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। ফেসবুকে এর প্রতিবাদে দুই, চারটি স্ট্যাটাস লেখা হয়। রাজনীতিবিদরা এ ব্যাপারে মুখ খোলেন না। ক্ষমতার হিসাব না থাকায় চুপ থাকেন নাগরিক সমাজ। দুই/এক দিন মানববন্ধন হয়। মিডিয়ায় এই সংবাদ কোন প্রচার পায় না। একটি পরিবারের স্বপ্ন মরে যায়।
এই কি সেই বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ কি আমরা চেয়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে টিভি চ্যানেল খুললেই উন্নয়নের গল্প। পরিচিত সব মুখ প্রতিদিন। বাংলাদেশ নাকি এগিয়ে যাচ্ছে। এই কি তবে এগিয়ে যাওয়া। পূর্ণিমার কথা মনে আছে। মনে আছে মুক্তিযুদ্ধকালীন নিপীড়নের শিকার বীরঙ্গনাদের কথা।
তাহলে এতো ত্যাগ, এতো সংগ্রামের কি মূল্য থাকলো। তনুরা যদি ধর্ষিতা হয়, যদি তার লাশ পড়ে থাকে জঙ্গলে তো এ কেমন স্বাধীনতা। এ কেমন বাংলাদেশ। এ কেমন উন্নয়ন। এই কি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ।
তনুদের জন্য যদি কেউ না দাঁড়ায়, যদি কোন প্রতিবাদ না হয়। তবে অপেক্ষা করুন। ফের এমন খবর পাবেন। দুই একদিন হয়তো আমাদের চোখ ঝাপসা হয়ে আসবে। আমরা আবার ভুলে যাবো। আমাদের ক্ষমা করো তনু। তবে আমাদের অক্ষমতাকে ক্ষমা করো না। আমাদের অভিশাপ দাও। এই অভিশাপে পুড়ে চারখার হয়ে যাই আমরা।
একজন মেধাবী ছাত্রী তনুকে যেভাবে হত্যা করা হলো…. আমরা সেই খবরটি প্রথম দিকে কোন মিডিয়াতেই দেখতে পেলাম না। এই বর্বর হত্যার ঘটনা দামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলে সে হিজাবধারী ছিল বলে কি? বা তার প্রকৃত কারন কি এখনো জানিনা। মানুষ কতটা বর্বর, বিকারগ্রস্থ ও নষ্ট হয়ে গেলে এমন ঘটনা ঘটাতে পারে তার নজির তনুকে ধর্ষন শেষে নৃসংশ ভাবে হত্যা করাই বড় প্রমান। যারা এ ঘটনার কোন প্রতিবাদ না করে চুপ করে বসে আছে ধিক্কার জানাই তাদের। আজকে যদি তনু বড়লোকের কোন মেয়ে হতো, যদি কোন নেতার মেয়ে হতো কিংবা কোন কোন মঞ্চের কর্মী হতো তাহলে সারাদেশে কি আস্ফালন হতো তা না বলাই ভালো। তবে এটুকু বলতেই চাই, কোথায় আজ মানবাধিকার নামধারী বুদ্ধিবেশ্যা নেতা-নেত্রীরা। যারা অল্প কিছুতেই দেশে ঝড় তোলেন। রাস্তায় নেমে মিডিয়ার সামনে বড় গলায় কথা বলেন।
কোথায় সেই সব সবজান্তা মানুষ গুলো, যারা ‘টক-শো’তে বসে জাতীকে জ্ঞান বিতরন করেন। কোথায় সেই নেতা-নেত্রীরা যারা একে অপরের বিরুদ্ধে কথার ‘খই’ ফোটান। বিবেকের কাঠগড়ায় আজ তাদের দাঁড়াবার সময় এসেছে। আমরা যারা সাধারন মানুষ তাদের করবার কিইবা আছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ কিংবা কিছু লেখালেখি। আজকে আমার এ বোনটিতে যেভাবে নির্যাতন শেষে হত্যা করা হলো…. এর দায় কে নেবে। আক্ষেপের সুরে বলতেই হয়- কি হবে বিচার চেয়ে। কার কাছে বিচার চাইবো। যার কাছে বিচার চাইবো, যারা বিচার করবেন সেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিংবা রাজনৈতিক নেতারাইতো ঔইসব জানোয়ারদের রক্ষক।
তনু বোন আমার… তোমার উপর যারা এমন নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করেছে তাদের বিচার হয়তো আমরা করতে পারবোনা। কিন্তু বোনটি তুমি শান্তিতে ঘুমাও…. আর পারি আর না পারি, তোমার আত্মার শান্তির জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়াতো করতে পারবো।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু’র হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে মানবাধিকার সংগঠন ইউনিভার্সাল ভয়েস ফর জাস্টিস লন্ডনের আলতাব আলী পার্কে ২৫ মার্চ শুক্রবার ১:৪০ এ মানব বন্ধনের আয়োজন করেছে । নিম্নের কিছু প্রশ্নের উত্তর বের করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রশাসনকে অনুরোধ করে আমাদের এই মানববন্ধন --
১) হত্যার বিষয়ে সোহাগীর পরিবার যেন কোনো তথ্য দিতে না পারে, সেজন্য তাদের নজরদারি রাখা হয়েছে। বন্ধ করে রাখা হয় তাদের মোবাইল ফোন। এবং সেনা কর্মকর্তারা তনুর পরিবারের সব সদস্যের ফোন নিয়ে যায় কেন? এর কারণ কি?
২) সকালে সোহাগীর সহপাঠীদের সেই বাসায় প্রথমে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি, পরবর্তীতে জোরাজুরিতে বিস্তারিত পরিচয় নিয়ে মাত্র অল্প কয়েকজনকে যেতে দেয়া হয়েছে, এর কারণ কি?
৩) ক্যান্টনম্যান্ট এলাকার ভেতরে এরকম একটা ঘটনা ঘটলো তারপর সেই অঞ্চলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কাউকে কি গ্রেফতার কিংবা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে? না করা হয়ে থাকলে কেন করা হয়নি ?
৪) কেন কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে আইএসপিআর কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি দেয়া হচ্ছে না সার্বিক পরস্থিতি নিয়ে?
৫) কেন টেলিভিশন মিডিয়া রিপোর্ট করছে না কিংবা করতে পারছে না?
৬) ভিক্টোরিয়া কলেজে হয়ে যাওয়া হাজারো ছাত্রের প্রতিবাদ সমাবেশের খবর কেন মিডিয়া কভারেজ পাচ্ছে না?
৭) রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম বাতিল, সেনানিবাসকে আইনের আওতায় আনার ষড়যন্ত্র, সানি তাকসিন এবং সীমাহীন ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা গুলোকে দামাচাপা দিতে কি এই তনুর হত্যাকান্ড ??? বাকী উত্তর জিজ্ঞাসা আপনাদের কাছে একটু ভাবুন চিন্তা করুন কোথায় বল মেরে কোথায় গোপন কি করা হচ্ছে ।
মুক্ত বুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
portesi
ReplyDelete