সূফি বরষণ
রাজনৈতিক ইতিহাসের বিতর্কে শেখ মুজিবুর রহমানকে যে যেভাবেই মূল্যায়ন করুন, এটা সবাই মানতে বাধ্য তিনি বাংলাদেশের একজন জাতীয় নেতা। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদানকে মানতেই হবে। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা না দেয়ার কারণে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের দিকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ এগিয়ে যায়। এটাই সত্য ইতিহাস, মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে স্বীকার করতেই হবে। যারা তাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে বা করছে তাঁরা ব্যক্তিগত সুবিধাবাদী জ্ঞানপাপী। শেখ মুজিবুর রহমানকে কেউ বঙ্গবন্ধু বলে কেউ জাতির জনক বা জাতির পি তা বলে কেউ মুজিব বলে সে যাই হোক আমি সেই বিষয়ে যেতে চাই না আমার আজকের আলোচনার বিষয় সম্পূর্ণ ভিন্ন।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের নেতা শেখ মুজির এক সময় অখন্ড পাকিস্তান গঠনের জন্য মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ক্লাস পরীক্ষা বাদ দিয়ে দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়েছেন আর মিছিল মিটিং করেছেন । এইকথা শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা অসমাপ্ত আত্মাজীবনীর ৬৫ পৃষ্ঠায় বিস্তারিত উল্লেখ আছে। মুসলিম মূল্যবোধ ও একজন বাঙালি মুসলিম নেতা হিসেবে কোন ঘটনার মধ্যদিয়ে এক রকম বাধ্য হয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনা করেন তার যথাযথ গবেষণার প্রয়োজন যা আজ পর্যন্ত হয়নি । শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এখন তৃতীয় দফায় ক্ষমতায় আছে। যে দলকে শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের সময় নিষিদ্ধ করেছিলেন। এখানে একটি বিষয় বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য যে, শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর পিতা মাতাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করতেন ভালোবাসতেন । যাদের দোয়ায় তিনি বড় নেতা হতে পেরেছিলেন।
৭৫ সালে শেখ মুজিব চারটি পত্রিকা রেখে বাকী সব পত্রিকা বন্ধ করে দিলেও তখন মাওলানা মহিউদ্দিন সাহেবের সম্পাদনায় প্রকাশিত মাসিক মদীনা পত্রিকা বন্ধ করেননি। কারণ শেখ মুজিবুর রহমানের পিতা ঐ পত্রিকার একজন নিয়মিত পাঠক ছিলেন। এটা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় যে মুজিব একজন মুসলিম মূল্যবোধের নেতা ছিলেন । কথা এখানেই শেষ নয় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশ বেতারে কুরআন তেলাওয়াত প্রচার করা হয়নি দীর্ঘদিন । সেই ঘটনায় শেখ মুজিবুর রহমান অনেক বেশি রেগে গিয়ে মুস্তফা জামানীকে ডেকে পাঠান দেখা করার জন্য তিনি ভয়ে সৈয়দ আলী আহসানকে সাথে নিয়ে যান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে দেখা করার জন্য । তখন শেখ মুজিবুর রহমানের ভয়ে মুস্তফা জামান কথা বলার সাহস করেননি । সৈয়দ আলী আহসানকে দেখে মুজিব আর কিছু না বললেও তিনি বলেছিলেন দেশ স্বাধীন করেছি রেডিওতে গীতা ত্রিপিটক পাঠ শুনার জন্য নয়! এখন থেকে কুরআন তেলাওয়াত বাধ্যতা মূলক প্রচার হবে আগে যেমন (পাকিস্তান আমলে) প্রচার হতো ।
আমি একজন মুসলমান এবং মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের সরকার প্রধান । আর এই ঘটনারও ব্যস্ত মুজিবের দৃষ্টিতে এনেছিলেন তাঁর পিতা । অপরদিকে যারা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তাদের বিরুদ্ধে মুজিবের অনুসারী এমনকি বামপন্থীরাও জোর দিয়ে প্রমাণ করেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম বনেদী পরিবারের জন্ম গ্রহণ করেছেন । তিনি একজন বাঙালি মুসলিম।
এতে কি আবারও বলতে হবে যে শেখ মুজিবুর রহমান একজন মুসলিম চেতনার বাঙালি নেতা ছিলেন না?? তিনি অবশ্যই এক জন বাঙালি মুসলিম নেতা ছিলেন ।কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় একসময়ের প্রবল প্রভাবশালী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে কারা জিরো বানিয়ে করুণ পরিণতির দি কে ঠেলে দেয় ।আর এই চক্র এখনও সক্রিয় এরা দেশ ও জাতির গণশত্রু ।এই দীর্ঘ আলোচনার অন্য প্রসঙ্গ আছে তা এখন বলছি, গত সোমবার ১৮ জানুয়ারি লন্ডনের সবচেয়ে বহুল প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা লন্ডন ইভিনিং স্টন্ডার্ড (london evening standard) টিউলিপ সিদ্দীকিকে নিয়ে mother of the house শিরোনামে একটি দীর্ঘ বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ঐ নিউজে বলা হয় তাঁর গর্ভের মেয়ে সন্তানের নাম weird রাখা হবে ইহুদি ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী।
এই বিষয়টি আমি সূফিকে অনেক বেশি ভাবিয়েছে। বাংলাদেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় মুসলিম মূল্যবোধ মুসলিম চেতনার দর্শন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনা বুঝার জন্য ফকির লালন শাহের আস্তানায় বারদির লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আস্তানায় ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার আনন্দ আশ্রমসহ অনেক সাধু সন্ন্যাসী এবং মুসলিম চিন্তাবীদ এমনকি মন্দির গীর্জা বৌদ্ধ বিহারে গিয়েছিলাম। গত ছয় বছর ধরে লন্ডন থাকার সুবাদে উন্নত বিশ্বের মানুষের চিন্তা চেতনার সাথে পরিচয় হলাম নতুন করে আর বুঝার চেষ্টা করলাম আরও গভীর ভাবে মুসলিম চেতনা মুসলিম মূল্যবোধ বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে ।
গতকাল ট্রেনে যাওয়ার সময় আমার সহযাত্রী হয়েছিলেন বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত সাংবাদিক তাকে এই বিষয় গুলোর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি প্রথমে এড়িয়ে যেতে চান। আমি যখন তাকে বললাম আপনার নামের শেষেও কিন্তু রহমান আছে ইসলামী মূল্যবোধ আর মুসলিম বাংলাদেশী জাতীয়তার চেতনা কিন্তু আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন না। এরপর তিনি আমার সাথে একমত হয় যে, আমাদেরকে পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন মুসলিম মূল্যবোধ মুসলিম চেতনা বাংলাদেশী জাতীয়তা ধরে রাখতে হবে এবং লালন করতে হবে।
টিউলিপ সিদ্দীকি এখন বৃটেনের একজন বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য। আধুনিক বিশ্বের বিবেচনায় আর মুক্ত চিন্তার জায়গা থেকে ঠিক এবং আমি তাকে সাধুবাদ জানায়। কিন্তু তাঁর মেয়ের নাম হবে weird রাখা হবে ইহুদি ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী এটা আমি কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না!!?? কেন তার মেয়ের হতে পারেনা শেখ ফাতিমা মুজিব বা শেখ ফাতিমা রহমান ? সেখানেই সূফির বিবেককের সাথে বিরোধ তৈরী হয় কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছি না। কারণ এমন তো হওয়ার কথা নয় তাইলে উন্নত বিশ্বে থেকে যদি বাঙালি কৃষ্টি বাঙালি জাতীয়তাবাদ আর মুসলিম মূল্যবোধা ধরে রাখতে না পারি তাহলে জীবনের স্বার্থকতা কোথায় ??।
তাইলে কি আমাদের ধরেই নিতে হবে যে, একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের তৃতীয় প্রজন্ম বা চতুর্থ প্রজন্ম থেকে আর মুসলমান থাকবে না!? বা যাদের নামের সাথে শেখ উপাধিও যোগ হবে না?? এই বিষয়টি কি প্রিয় পাঠক আপনাদের কে একটু ভাবায় না? একটু গভীর মনোযোগ দিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন এই দীর্ঘ আলোচনায় আমি কি বলতে চেয়েছি । এই লেখা পড়ে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ বা শেখ হাসিনা বা শেখ রেহানা আমার প্রতি রুষ্ট হতে পারেন কিন্তু আমি সত্য বলতে বা মুসলিম মূল্যবোধের কথা বলতে ভয় পাই না। এই একটি জায়গায় যদি আপোষ করি তবে তো আমাদের গর্ব করার মতো কিছুই থাকে না।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের বলিষ্ঠ উদগাতা শেখ মুজিবুর রহমান । তিনি কি জানতেন, তার বংশধর একদিন এই জাতীয়তাবাদের সীমারেখা ভেঙে বিশ্ব জাতীয়তার ঘূর্ণাবর্তে মিশে যাবে? তাঁর বংশীয় মুসলিম উপাধি ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সাথে মিশে বিলীন হয়ে যাবে? । শেখ হাসিনার বড় মেয়ে পুতুল ছাড়া দু’বোন হাসিনা ও রেহানার আর কোনো ছেলেমেয়ে (রেহানার ছোট মেয়ে রূপন্তি এখনও অবিবাহিত) বাঙালি বিয়ে করেনি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভামায়ার একজন আমেরিকান খ্রিস্টান , টিউলিপের স্বামী ক্রিশ্চিয়ান সেইন্ট জন পার্সি একজন ব্রিটিশ ইহুদি , শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিক ববি ২০০৮ সালে বিয়ে করেন পেপ্পি কেভিনিয়ামি নামের এক ইহুদি ইউরোপিয়ান নাগরিককে। ববি এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক। ছেলের নাম কাইয়াস , মেয়ের নাম লীলাতুলী । এদের কারো নামের আগে বাংলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম বনেদী পরিবারের বংশীয় উপাধি শেখ নাই। গোপালগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম জাতীয়তাবাদী শেখ পরিবার এখন বিশ্বের অন্যান্য জাতি ধর্মের সাথে মিশে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে !?।’ জয় এবং তার বিদেশিনী স্ত্রী ক্রিস্টিনা ওভামায়ারকে নিয়ে দেশের মানুষ বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে । একে তো ক্রিস্টিনা বিদেশিনী, তার ওপর আবার ভিন্নধর্ম মতাবলম্বী একজন খ্রিস্টান । আবারও যদি টিউলিপ সিদ্দীকিকের মেয়ের নাম হয় ইহুদি ধর্মের অনুযায়ী, তাইলে আর মুসলিম মূল্যবোধের নাম শেখ বংশীয় উপাধি থাকছে।
শেখ মুজিব পরিবারে বিদেশি এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বী বিয়ে করার ব্যাপারে কেবল জয়ই নয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ রেহানার পুত্র-কন্যা দুজনই বিয়ে করেছেন ভিনদেশি পাত্র-পাত্রীকে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ববি বেশ কয়েকবার দেশে আসেন। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে তিনি সস্ত্রীক ভারত সফর করেন।
এখন আপনারই বলেন আপনার তৃতীয় চতুর্থ প্রজন্মের বংশধররা যদি ইহুদি খ্রিস্টান নাম নিয়ে গীর্জা বা সেনেগগে যায় তবে কি আমি আপনি কবরে থেকে শান্তিতে থাকবো? প্রিয় পাঠক আপনাদের কাছে প্রশ্ন কবরে এখন শেখ মুজিবুর রহমান কেমন আছেন??
বিশেষ দ্রষ্টব্য : সূফিরা মিথ্যা বলে না মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়ে যায়।
মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ
সুফি ভাই, আমি ব্যক্তিগত ভাবে আপনাকে খুব পছন্দ করি এবং আপনার লেখাগুলো দারুণ ভাল লাগে। আপনি সত্য ও ন্যায়ের কথা বলেন এই জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। দোয়া রইলো এবং আমার জন্যও দোয়া করবেন।
ReplyDelete