আমার কাছে চার্লস ডারউইন
এবনে গোলাম সামাদ
আমার কাছে আজকাল অনেক রকম লোক আসেন। জানতে চান অনেক বিষয়ে। কিছুদিন আগে একজন লোক এসেছিলেন। তিনি বললেন, তিনি চার্লস ডারউইন সম্বন্ধে একটি বই লিখবেন বলে মনস্থির করেছেন। তিনি তার বইতে প্রমাণ করবেন, ডারউইন যা বলেছেন তার সবকিছুই মিথ্যা। ডারউইনের বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। আমি তাকে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করি, ‘ডারউইন যা বলেছেন সে সম্বন্ধে কী আপনি অবগত আছেন? কাউকে ভ্রান্ত প্রমাণ করতে হলে তার বক্তব্য সম্বন্ধে ভালোভাবে জ্ঞাত হওয়া দরকার।’ খুব আশ্চর্য হলাম যখন দেখলাম ওই ভদ্রলোক ডারউইনের লেখা একটি বইও পড়েননি। এমনকি তিনি পড়েননি ডারউইন সম্পর্কে লিখিত কোনো নির্ভরযোগ্য বিজ্ঞানীর লেখা কোনো বই। অথচ তিনি চাচ্ছেন, ডারউইনকে মিথ্যা প্রমাণ করতে! তার সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তিনি একজন খুবই ধর্মবৎসল ব্যক্তি। তিনি মনে করেন, ডারউইন যা বলেছেন তা ধর্ম বিরুদ্ধ। তাই তিনি চান তাকে মিথ্যা প্রমাণ করতে। তিনি শুনেছেন, আমি একজন ডারউইন বিরোধী। তাই মনে করেছেন, আমি তাকে তার বই লেখার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারি। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করতাম, তখন হঠাৎ এক ক্লাসে ছাত্রদের বলেছিলাম, আমি ডারউইনবাদ (Darwinism)-এ আস্থাবান নই। তখন থেকেই রটে যায় আমি ডারউইন বিরোধী। আমার ডারউইন বিরোধী বক্তব্য গিয়ে পৌঁছায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপকের কানে। তিনি বলেন, আমি ভয়ংকর রকমের মৌলবাদী, তাই ডারউইনের বিরোধিতা করি। তিনি জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন না। পরে জেনেছিলাম, তিনিও ডারউইনের লেখা কোনো বই পড়েননি। তবে পড়েছেন তার সম্পর্কে অন্যের কিছু লেখা। ডারউইন সম্বন্ধে তার ধারণা, ওইসব লেখার মধ্যে বিবৃত তথ্যের মধ্যে আছে সীমিত। তিনি ডারউইন নিয়ে কোনো গভীর অধ্যয়ন করেননি। ধরে নিয়েছেন, ডারউইন যা বলেছেন, তার সবকিছুই সত্য। ডারউইন বিরোধীরা সবাই পয়লা নম্বর ধর্মান্ধ মৌলবাদী। মৌলবাদীরা ছাড়া আর কেউ আজকের দিনে ডারউইনের বিরূপ সমালোচনা করতেই পারে না।
ডারউইন তার বিখ্যাত বই The Origin of Species। প্রকাশ করেন ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে। বইটি সে সময় বিশেষ বিতর্কের জন্ম দেয় বিলাতে। খুব কম বই মানুষের চিন্তায় এই বইটির মতো প্রভাব ফেলতে পেরেছে। বহু আলোচনা হয়েছে এই বইটিকে নিয়ে। বইটিতে প্রথমত ডারউইন প্রমাণ করতে চেয়েছেন, বিবর্তন ঘটেছে এবং ঘটছে। দ্বিতীয়ত তিনি দিতে চেয়েছেন বিবর্তন কেন ঘটছে, তার একটা ব্যাখ্যা। বিবর্তনবাদ এখন জীববিজ্ঞানে সাধারণভাবে স্বীকৃত। কিন্তু জীববিবর্তন সম্বন্ধে ডারউইনের দেয়া ব্যাখ্যা হয়ে আছে বিতর্কিত। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিবর্তনবাদ (Theory of Evolution) আগেও ছিল। ডারউইন এর উদ্ভাবক নন। তার আগেও অনেকে যেমন- লামার্ক (Lamarck) জীববিবর্তন সম্বন্ধে যা বলেছেন তাও যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য হয়েই আছে। বিবর্তনবাদ বলে একরকম প্রাণী বা উদ্ভিদ থেকে ক্রমপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অন্যরকম প্রাণী অথবা উদ্ভিদের উদ্ভব সম্ভব। এ বিষয়ে জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে এখন আর মতোবিরোধ নেই। কিন্তু মতোবিরোধ আছে এই ক্রমপরিবর্তন ঘটছে কেন, তা নিয়ে। এ ক্ষেত্রে ডারউইনের সঙ্গে অনেকেরই থাকতে দেখা যায়, এখনও গুরুতর মতোবিরোধ। ডারউইন মনে করতেন, পরিবর্তন স্বাভাবিক ব্যাপার। দেখা গেল পরিবর্তনের ফলে কোনো একটা প্রাণীর দাঁত কিছুটা ভিন্নতর হলো। দাঁতের জন্য সে অন্যের ওপর লাভ করতে পারে জীবন সংগ্রামে অধিক দক্ষতা। পেতে পারে বেঁচে থাকার অধিক সুযোগ। তার এই দাঁতের বৈশিষ্ট্য তার বংশধারা বর্তাতে পারে। তারাও পেতে পারে বেঁচে থাকার অধিক সুযোগ। এভাবে দেখা যাবে ওই বিশেষ ধরনের দাঁতওয়ালা প্রাণীর বংশ বৃদ্ধি হতে। যাদের ওই বৈশিষ্ট্য নেই, তারা মারা যেতে থাকবে। কারণ তারা পারবে না জীবনযুদ্ধে টিকতে। শেষে এক সময় দেখা যাবে ওই নতুন বৈশিষ্ট্যযুক্ত দাঁতগুলোরাই কেবল বেঁচে। এভাবে ক্রমশ একরকম প্রাণী থেকে অন্যরকম প্রাণীর উদ্ভব হচ্ছে। ডারউইনের এই মতবাদকে বলে প্রাকৃতিক নির্বাচন (Natural Selection)। যারা বাঁচে তারা সবল অর্থাৎ বাঁচবার যোগ্য। যারা দুর্বল অর্থাৎ বাঁচবার অযোগ্য, তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরিবেশই ঠিক করে কে যোগ্য আর কে অযোগ্য। এই মতবাদকে এখন অনেকভাবেই সমালোচনা করা চলে। কারণ খুব সামান্য পরিমাণ পরিবর্তন কোনো প্রাণী অথবা উদ্ভিদকে জীবনযুদ্ধে বিরাট সাফল্য মোটেও এনে দিতে পারে না। পক্ষান্তরে অনেক প্রাণীর চোখ নেই। তারা আজও বেঁচে আছে। যাদের মধ্যে চোখ আছে, তারাও সকলে একরকম নয়। মৌমাছি আর মানুষের চোখে পার্থক্য অনেক। সবার ক্ষেত্রে চোখের বিবর্তন একভাবে ঘটেনি। সর্বোপরি চোখের মতো একটা অঙ্গের উদ্ভব হতে লাগে বহু পরিবর্তন। আর এসব পরিবর্তন ঘটবার জন্য থাকতে হয় একটা পরিবর্তনের সঙ্গে আর একটি পরিবর্তনের সংগতি। প্রশ্ন ওঠে, এই সংগতি ঘটছে কীভাবে। এটা কী কেবলই অন্ধ প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটছে। নাকি এর পেছনে কাজ করছে কোনো পরিকল্পনা (Plan)! একটা কেঁচোকে কেটে ফেললে তা থেকে দুটো কেঁচোর জন্ম হতে দেখা যায়। লেজের দিক থেকে গজাতে দেখা যায় লেজ, আর মাথার দিক থেকে মাথা। এলোমেলোভাবে একটা কেঁচো থেকে দুটো কেঁচোর সৃষ্টি হয় না। ডারউইনের মতের সাহায্যে এর ব্যাখ্যা করা খুবই কঠিন। বলতে হয়, অসম্ভব। ডারউইন, জীববিবর্তনের ক্ষেত্রে জীবন সংগ্রাম (Struggle for Existence) কথার ওপর খুব জোর দিয়েছেন। কিন্তু পরীক্ষামূলকভাবে তার এই মত প্রমাণ করা যায় না। একটা চৌবাচ্চার পানিতে যদি কিছু শৈবাল রেখে তাতে এমন মাছ ছাড়া হয় যা ওই শৈবাল খেয়ে বাঁচে, তবে প্রথমে দেখা যায়, ওই শৈবাল খেয়ে ওই মাছের বংশবৃদ্ধি ঘটতে। কিন্তু যদি মাছগুলো এমন হয় যে তারা শৈবালকে খুব তাড়াতাড়ি খায় এবং তাদের খাবার মাত্রার সঙ্গে শৈবালদের বংশবৃদ্ধির হারের কোনো সংগতি থাকে না, তবে একপর্যায়ে ওই চৌবাচ্চায় আর কোনো শৈবাল অবশিষ্ট থাকে না। মাছগুলো তখন শৈবাল খেতে পায় না। খাদ্যাভাবে মারা যেতে থাকে। অর্থাৎ প্রথমে জীবনযুদ্ধে শৈবাল পরাজিত হয়। মাছ জেতে। কিন্তু জিতেও শেষ পর্যন্ত তার কোনো লাভ হয় না। সে মারা যেতে থাকে খাদ্যাভাবে। তাই জীবন যুদ্ধের মাধ্যমে জীব বিবর্তনের ব্যাখ্যা প্রদান সম্ভব নয়। দুর্বলের অস্তিত্ব বিলুপ্তির সঙ্গে সঙ্গে সবলের অস্তিত্বও অনিশ্চিত হয়েই পড়ে।
ডারউইনের মতবাদ এক সময় ইউরোপে যুদ্ধের জন্য যুক্তি জুগিয়েছে। দুই দু’টি বিশ্বযুদ্ধ ঘটেছে ডারউইন থেকে যুক্তি যোজন করে। বলা হয়েছে, যুদ্ধ ঠিক করে দেবে কারা যোগ্য, আর কারা নয়। যারা যোগ্য তারা টিকবে। আর তাদেরই মাধ্যমে হবে উন্নত মানব সৃষ্টি। কিন্তু এরকম যুক্তি আজ আর কেউ দেন না। কারণ দু’টি বিশ্বযুদ্ধের ফলে জৈবিক দিক থেকে মানুষ বদলায়নি। আর মানুষ এমন সব মারণাস্ত্র এখন বানিয়েছে এবং বানাচ্ছে, যা দিয়ে যুদ্ধ করে মানুষ এই পৃথিবীতে সবাই একই সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যেতেও পারে। আমি যখন ডারউইনের বিরোধিতা করি; তখন এই কারণেই করি। কোনো ধর্ম বিশ্বাসের কারণে নয়। বিবর্তন ঘটেছে এটার পক্ষে অনেক প্রমাণ দেয়া যায়। কিন্তু কেন ঘটেছে অথবা ঘটছে, তার ব্যাখ্যা দেয়া সহজ নয়। ডারউইন তা দিতে পেরেছেন, এমন কথা বলা চলে না। ডারউইনকে সত্য বলে স্বীকার করলে প্রভু জাতির (Superior Race) মতবাদকে মেনে নিতে হবে। আর সেই সঙ্গে বলতে হয়, জোর যার মুল্লুক তার। ন্যায়-নীতি বলে কোনোকিছু নেই এ সংসারে।
ডারউইন লক্ষ করেছিলেন, পশুপালকরা গৃহপালিত প্রাণীর প্রজননের সময় তাদের ইচ্ছামতো বাছাই করা পুরুষ পশুর সঙ্গে নারী পশুর মিলন ঘটিয়ে নতুন জাতের পশুর উদ্ভাবন করতে চায়। এভাবে করা সম্ভব হয় অধিক দুগ্ধপ্রদান যোগ্য গাভীর। ডারউইন একে বলেছেন কৃত্রিম নির্বাচন (Artificial Selection)। কৃত্রিম, কারণ এখানে মানুষের ইচ্ছা ও বিচার বুদ্ধি কাজ করে চলে। কিন্তু প্রকৃতিতে যারা বাঁচার যোগ্য তারাই কেবল বাঁচে। যারা বাঁচার বেশি যোগ্য তারা বিস্তার করতে পারে অধিক বংশধর। অন্যরা পারে না। শীতের দেশে দেখা যায়, অধিক লোমযুক্ত প্রাণী। কারণ লোম আছে বলেই তারা বাঁচতে পারে শীতের হাত থেকে। যাদের লোম যত বেশি তারা বাঁচতে পারে তত সহজে। এভাবেই শীতের দেশে বেড়েছে অধিক লোমশ প্রাণীর বংশ। এখানে নির্বাচনটা ঘটেছে সহজ প্রাকৃতিক নিয়মে। এর পেছনে কাজ করছে না কোনো সচেতন পরিকল্পনা। প্রাকৃতিক পরিবেশ নির্বাচন করেছে ওই পরিবেশে বাঁচবার যোগ্য প্রাণীদের। কিন্তু একই পরিবেশে বহু বিচিত্র প্রাণীকে বাস করতে দেখা যায়। এই বৈচিত্র্যের ব্যাখ্যা সহজ নয়। সবচেয়ে কঠিন ব্যাখ্যা করা, কীভাবে একই পরিবেশে সৃষ্টি হয় নর-নারীর। ছেলে আর মেয়ের মধ্যকার পার্থক্যের সৃষ্টি হতে পারে না প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে। পুরুষ শারীরিক শক্তিতে সবল হলেও নারী ছাড়া বংশ রক্ষা হয় না। শারীরিক শক্তি দিয়েই তাই কেবল জীববিবর্তনের ধারা নির্ধারিত নয়। একই প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্মাচ্ছে পুরুষ এবং নারী। কিন্তু একই পরিবেশে জন্মেও তারা হচ্ছে বহু ভিন্ন। ডারউইন এই ঘটনার ব্যাখ্যা করবার জন্য প্রদান করেছেন তার পরিপূরক যৌন নির্বাচন তত্ত্ব (Theory of Sexual Selection)। কিন্তু তার এই তত্ত্ব বিজ্ঞানী মহলে মোটেও আদৃত নয়।
চীনের পিকিং শহরের কাছে চকুতিয়েন নামক স্থানে মানুষের যে কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছে, তার মাথার খুলির গড়নের সঙ্গে সিম্পাঞ্জির মাথার খুলির সাদৃশ্য আছে। এসব মানুষের ভ্রুর হাড় ছিল সিম্পাঞ্জির মতো উঁচু। কঙ্কাল থেকে বুঝা যায় এরা সামনের দিকে কিছুটা ঝুকে হাঁটত। কিন্তু এদের কঙ্কালের সঙ্গে পাওয়া গিয়েছে অন্য জন্তুর পোড়া হাড়। যা থেকে সহজেই অনুমান করা চলে, ওইসব মানুষ জন্তুর মাংস খেত আগুনে ঝলসে। কাঁচা মাংস চিবিয়ে নয়। এছাড়া ওইসব মানুষ হরিণের শিং দিয়ে বানিয়েছে পশু শিকারের হাতিয়ার, অনেক নিপুণভাবে। এদিক থেকে ওদের আচরণ ছিল আমাদেরই মতো। হতে পারে ওই রকম মানুষের ক্রমপরিবর্তনের মধ্যে দিয়েই উদ্ভব ঘটেছে আমাদের মতো মানুষের। ডারউইন মারা যাবার অনেক পরে ১৯১৯ থেকে ১৯২২-এর মধ্যে এই মানুষের কঙ্কাল আবিষ্কৃত হয়েছে। ডারউইন বলেছিলেন, এরকম কঙ্কাল একদিন আবিষ্কৃত হবে। ডারউইনের সব ধারণাই যে ভুল প্রমাণিত হয়েছে, তা নয়। বিজ্ঞানীরা এখন চীনের এই মানব কঙ্কালের বয়স প্রায় ১০ লাখ বছর বলে অনুমান করেন। এত দীর্ঘ সময়ে একটা প্রাণী ক্রমশ বদলাতেই পারে। পরিণত হতে পারে আমাদের মতো মানুষে (Homo Sapiens)।
পিকিং শহরের কাছে চকুতিয়েন নামক স্থানে মানব কঙ্কালকে সাধারণভাবে বলা হয় পিকিং মানব। বিজ্ঞানীরা বলেন Homo Erectus Pekinensis যারা পিকিং মানব নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা করেছেন, তাদের মধ্যে ফ্রান্সের Teilhard de Ch-ardin -এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি ছিলেন একজন ফরাসি ক্যাথলিক ধর্মযাজক। বিবর্তন কেন ঘটছে, সে সম্বন্ধে এখন একাধিক মতবাদের উদ্ভব হয়েছে। বিভিন্ন ফসিল (Fossil) দের বিবর্তনিক ধারায় পর পর সাজিয়ে অনুশীলন করলে দেখা যায়, জীবের বিবর্তন এলোমেলোভাবে হচ্ছে না, হচ্ছে নির্দিষ্ট ধারায়। ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিরা মনে করেন এই ধারাটি বিধাতা নির্দিষ্ট। বিবর্তন এলোমেলোভাবে ঘটছে না, ঘটছে সুনির্দিষ্ট ধারায়, এই মতবাদকে বলা হয় অরথোজেনেসিস (Orthogenisis)। তিলহার দ্য সারদ্যাঁ অরথোজেনেসিস মতবাদকে মানব বিবর্তনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান। অরথোজেনেসিস মতবাদে যারা আস্থাবান, তারা ডারউইনের সমালোচনা করে বলেন, জীব জাতের বৈচিত্র্যকে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রয়োজন দিয়ে ব্যাখ্যা করা চলে না। কারণ প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈচিত্র্যের তুলনায় জীবন জগতের বৈচিত্র্য বহুগুণে বেশি।
আমাদের দেশে এখন নানারকম মতবাদিক দ্ব›দ্ব চলেছে। ধর্মতাত্ত্বিকরা যে রকম ভাবছেন মুক্ত চিন্তাবাদীরা ভাবছেন তা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে। ধর্মতাত্ত্বিকরা করছেন ডারউইনের সমালোচনা। ডারউইনের সমালোচনা করতে গিয়ে তারা জীববিবর্তন সম্পর্কেই পোষণ করছেন বিরূপ মনোভাব। পক্ষান্তরে, মুক্ত চিন্তাবাদী বা সেকুলারিস্টরা চাচ্ছেন ডারউইনবাদকে মাথায় করে নাচতে। কারণ এর সাহায্যে ধর্ম বিশ্বাসকে আঘাত করা যায়। করা চলে সৃষ্টিশ্বরবাদের সমালোচনা। কিন্তু ডারউইনবাদ এখন বিজ্ঞানী সমাজে আগের মতো অত আদৃত নয়। এ কথাটা এরাও জানেন না অনেকে। ডারউইনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, তিনি মানুষের বৈশিষ্ট্যসমূহকে বিবেচনায় নিতে চাননি। তিনি মানুষকে বিচার করেছেন, আর পাঁচটা প্রাণীর মতো একই কাতারে রেখে। তিনি লক্ষ করেননি, শীতের দেশের প্রাণীর গায়ে যেমন লম্বা লোম হয়, শীতের দেশে বসবাসকারী মানুষের দেহে তেমন হয় না। শীতের দেশে মানুষ বাঁচে উপযুক্ত জামা গায়ে দিয়ে। আগুন জ্বালিয়ে বা অন্য উপায়ে ঘর গরম রেখে। মানুষ কেবল প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চায় না, সে চায় নিজের বাঁচবার উপযুক্ত পরিবেশকে গড়তে। সৃষ্টি করতে চায় তার নিজের বেঁচে থাকবার অনুক‚ল অবস্থার। হতে পারে মানুষের পূর্বপুরুষ কোনো একসময় ছিল বানর জাতীয় বৃক্ষচারী প্রাণী। কিন্তু এখন আর সে তেমন প্রাণী নয়। মানুষ সৃজনশীল প্রাণী, কিন্তু অন্যরা তা নয়। এটাই তার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। ডারউইন চেয়েছিলেন মানুষ কতটা অন্য প্রাণীর মতো, সেটা প্রমাণ করতে। কিন্তু অন্য প্রাণী থেকে মানুষ কতটা ভিন্ন, সে বিষয় তিনি বিশ্লেষণের প্রয়োজন দেখেননি। অথচ এই বিশ্লেষণ যথেষ্ট গুরুত্ববহ। মানুষই কেবল জীব, যার মধ্যে উন্মেষ ঘটেছে ধর্ম, নীতি চেতনা এবং সৌন্দর্য বোধের। ধর্মের মাধ্যমে মানুষ পেতে চেয়েছে নীতি চেতনার যুক্তি। ধর্মকে কেন্দ্র করে ঘটেছে শিল্পকলার বিকাশ। ধর্ম মানুষের মনে অনেক অন্ধ ধারণার জন্ম দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কেবল তাতেই তার সব পরিচয় পরিস্ফুট নয়। ধর্মের একটা ব্যাপক তাৎপর্য আছে।
ডারউইনের ব্যক্তিগত জীবন ছিল খুবই ভিন্ন প্রকৃতির। ডারউইন নিয়মিত গির্জায় যেতেন, প্রার্থনা করতে। বিজ্ঞান চিন্তার ক্ষেত্রে ছিলেন ভিন্ন। ধর্ম সম্বন্ধে ডারউইন কোনো বই লিখে যাননি। লিখে গেলে হয়ত জানা যেত তিনি কেন অত নিয়মিত গির্জায় যাবার প্রয়োজন অনুভব করতেন। ডারউইন একসময় কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মতত্ত¡ পড়েছিলেন, ধর্মযাজক হবার অভিপ্রায়ে।
শেষ জীবনে ডারউইন জীববিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লামার্ক-এর মতবাদকে আংশিকভাবে গ্রহণ করেন। লামার্ক মনে করতেন, বিড়ালের পেছনের পা দু’টি লাফ দেবার জন্য অধিক উপযোগী হতে পেরেছে বিড়ালের চেষ্টার ফলে। বিড়াল চেষ্টা করেছে পিছনের পা দু’টির ওপর ভর করে লাফ দেবার। লাফ দিয়ে শিকার ধরবার। এই চেষ্টার ফলেই ক্রমে বিড়ালের পেছনের পা দু’টি লাফ দেবার অধিক উপযোগী হতে পেরেছে। ডারউইন প্রথমে এরকম কিছুতে আস্থাশীল ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, যেসব বিড়ালের পা আপনা থেকেই লাফ দেবার অধিক উপযোগী হতে পেরেছে তারাই বেঁচেছে, অন্যরা বাঁচেনি। তাই এখন যেসব বিড়াল দেখা যায়, তাদের সবার পেছনের পা দু’টি তার ওপর ভর দিয়ে লাফ দেবার জন্য অধিক উপযোগী। ডারউইন প্রথম দিকে মনে করেছেন, পরিবর্তন ঘটে আপনা থেকেই। এই পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো উদ্দেশ্য ক্রিয়াশীল নয়। কিন্তু লামার্ক মনে করতেন, জীব বিবর্তনের ক্ষেত্রে জীবের ভালোভাবে বাঁচবার আকাক্সক্ষা কাজ করে চলেছে। তাই তারা ক্রমশ উন্নতি করছে। ডারউইন তার শেষ জীবনে জীবন বিবর্তনের ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছিলেন কিছুটা উদ্দেশ্যবাদী। যা ঠিক প্রাকৃতিক দর্শনের (Naturalism) ছকে পড়ে না। প্রকৃতিবাদীরা চান পূর্ববর্তী কারণের সাহায্যে পরবর্তী ঘটনার ব্যাখ্যা করতে। তারা অন্ত-কারণ (Final Cause) বা উদ্দেশ্য বলে কোনোকিছুকে স্বীকার করেন না। কিন্তু লামার্ক অন্ত-কারণে আস্থাশীল ছিলেন। তিনি মনে করতেন, কোনো জীবে পরিবর্তন আসবার মূলে আছে তার কোনো উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা। বিড়াল তার পেছনের পায়ের ওপর ভর দিয়ে লাফ দিতে চেয়েছে বলেই তার পেছনের পা হয়ে উঠেছে ক্রমশ লাফ দেবার জন্য অধিক উপযোগী।
চার্লস ডারউইন জন্মেছিলেন বিলাতে, ১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে। আর মারা যান ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে। বিলাতে ডারউইন তুলেছিলেন বিতর্কের ঝড়। আমেরিকাতেও হয়েছিল বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ১৯২০ সালে টেনেসি (Tenessee) অঙ্গরাজ্যের গভর্নর তার এলাকার স্কুল ও কলেজে আইন করে ডারউইন পড়ানো নিষিদ্ধ করেন। যা এখনও বলবৎ আছে। উঠে যায়নি। বর্তমানে আমাদের দেশেও অনেকে বলছেন, ডারউইনবাদ নিষিদ্ধ করবারই কথা। কদিন আগে আমাদের দেশের একটি বহুল পঠিত দৈনিক পত্রিকায় দেখলাম, কেউ লিখেছেন, “ধর্মের সঙ্গে বিজ্ঞানের সংঘর্ষ যারা বাঁধিয়েছিলেন সেই সংঘর্ষের অন্যতম হোতা হলেন চার্লস ডারউইন। তার প্রজাতির জন্মতত্তে¡ বলেছেন যে, মানবজাতি আদিতে ছিল বানর। বিবর্তনের মাধ্যমে তারা বর্তমান পর্যায়ে অর্থাৎ মানুষের চেহারায় রূপান্তরিত হয়েছে।” সম্ভবত এই ব্যক্তিও ডারউইনের লেখা কোনো বই পড়েননি। পড়লে তিনি দেখতেন, তাতে এমন কোনো কথা নেই। ঠিক এখনকার বানরকেই ডারউইন মানুষের সরাসরি পূর্বপুরষ বলে চিিহ্নত করেননি। যা বলেছেন, তা হলোÑ বানর এবং মানুষের পূর্বপুরুষ ছিল একই শ্রেণির প্রাণী। এই পূর্বপুরুষের সঙ্গে বানরের যতটা মিল আছে, মানুষের তা নেই। ডারউইন ১৮৭১ সালে লেখেন ‘মানুষের অভ্যুদয়’ (Descent of Man) নামক তথ্যপূর্ণ গ্রন্থ। ডারউইনের মতে, মানুষের আদি পুরুষ ছিল কোয়াদ্রুমানা (Quadrumana)-এর সমপর্যায়ভুক্ত জীব। এখন বলা হয়, মানুষের আদি পুরুষ প্রথমে প্রাইমেট (Primate) বর্গের অন্তর্গত পুরোপুরি বৃক্ষচারী জীব ছিল। পরে তারা হয়েছে ভ‚মিচর।
বিবর্তনবাদ সম্বন্ধে দুটো বিষয়কে পরিষ্কার মনে রাখতে হবে। একটা হচ্ছে ঘটনা। আরেকটা হচ্ছে ঘটনার ব্যাখ্যা। বিবর্তন যে ঘটেছে এবং ঘটছে সে সম্বন্ধে বিজ্ঞানীরা প্রচুর প্রমাণ জোগাড় করতে পেরেছেন। জীব বিবর্তন তাই আর বির্তকের বিষয় নয়। কিন্তু বিবর্তন কেন ঘটেছে এবং ঘটছে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মতের অমিল আছে প্রচুর। তাই ক্রমবিবর্তনকে স্বীকার করলেও ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচন মতবাদ সম্পর্কে সন্দেহ পোষণের যুক্তি আছে। এখন কিছু বৈজ্ঞানিক বলছেন, বিবর্তন একটানা ঘটে চলে না। কখনও ঘটে দ্রুত। আবার কখনও থেমে থাকে। কীটপতঙ্গ এই অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। পাখিরা এখন আর বিবর্তিত হচ্ছে না। তাদের বিবর্তন থেমে গিয়েছে মিয়োসিন (Miocene) যুগে। অনেক স্তন্যপায়ী প্রাণী প্লিওসিন (Pliocene) যুগের পর আর বদলায়নি। তবে মানুষের মধ্যে এখনও বদলাবার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তার বিবর্তন শেষ হয়ে যায়নি, দৈহিক দিক থেকেও। আমি বলেছি, ডারউইনবাদকে আমি মেনে নিতে পারি না। কোনো ধর্মীয় কারণে নয়। অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্য- মানুষের চিন্তার সকল ক্ষেত্রেই ডারউইনের জীবন সংগ্রামবাদ (Struggle for Existence) যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করেছে। আর শেষ পর্যন্ত সেটা হয়েছে মানুষের জন্য যথেষ্ট ক্ষতিরই কারণ। প্রধানত এজন্যই আমি ডারউইনের বিরোধিতা করি। অনেকের মতে, ডারউইনের প্রভাবে ঘটতে পেরেছে দুই দু’টি বিশ্বযুদ্ধ। মানুষ ভাবতে পেরেছে যুদ্ধের মাধ্যমে উন্নতির সম্ভাব্যতার কথা। অনিয়ন্ত্রিত ধনতন্ত্রেরও যুক্তি জোগায় ডারউইনবাদ। আবার অনেকের মতে, অনিয়ন্ত্রিত ধনতন্ত্রেরও যুক্তিই প্রতিফলিত হয়েছে ডারউইনবাদের মধ্যে। ডারউইন জন্মেছিলেন ব্রিটিশ ধনতন্ত্রের খর মধ্যাহ্নে।
প্রাণী জগতে রয়েছে খাদ্য-খাদক সম্পর্ক। কিন্তু সেটাই একমাত্র সত্য নয়। প্রকৃতিতে বাঁচবার জন্য প্রয়োজন করে বিশেষ ধরনের ভারসাম্য (Balance of Nature)। ডারউইনের চিন্তাধারায় এই দিকটির কথা বিশেষভাবেই পড়েছে বাদ। প্রাণী জগতে যারা মাংসাশী তাদের চেয়ে যারা উদ্ভিদ ভোজী তারা হলো সংখ্যায় অধিক। আবার উদ্ভিদ ভোজীদের মধ্যে যারা খুব তাড়াতাড়ি এবং খুব বেশি করে খায়, তারা খাদ্যাভাবে মারা যায় বেশি। জীবন সংগ্রাম কথাটা একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যেই কেবল খাটে। এটাকে এই সীমার বাইরে নিলে তা হয়ে দাঁড়ায় খাদ্যাভাবে একটি শক্তিমান প্রজাতির (Species) মৃত্যুরই কারণ। বিবর্তনের ক্ষেত্রে তখন তা আর মোটেও সহায়ক ভ‚মিকা পালন করে না। এটি ডারউইনবাদের দুর্বলতা। বলেছেন, খ্যাতনামা জীববিজ্ঞানী জে বি এস হলোডেন।
আমরা একসময় ছিলাম ইংরেজদের নিয়ন্ত্রণে। আমরা শিখেছি ইংরেজি ভাষা। ডারউইনকে আমরা যেভাবে জানবার সুযোগ পেয়েছি, লামার্ককে তা পাইনি। জীববিজ্ঞানে লামার্কের অবদান ডারউইনের থেকে কিছুমাত্র কম নয়। নিজের চেষ্টায় উন্নতি সম্ভব, লামার্ক এটা বিশ্বাস করতেন। আর এই চেষ্টার মধ্যে দিয়ে জীব জগতে ক্রমবিবর্তন ঘটছে, এটা তিনি প্রমাণ করতে চান। তিনি এটা প্রমাণ করতে পেরেছেন কিনা, সেটাও বিতর্কের বিষয়। তবে শেষ জীবনে ডারউইন হতে চেয়েছেন কিছুটা লামার্কমুখী। আমি ডারউইনের তুলনায় লামার্ককে অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করি। লামার্ক একসময় করতেন উদ্ভিদ বিদ্যার চর্চা। পরে যখন তার বয়স পঞ্চাশে এসে ঠেকে, তখন তিনি চর্চা আরম্ভ করেন প্রাণীবিদ্যার। অমেরুদণ্ডী প্রাণীদের শ্রেণি বন্ধনের ক্ষেত্রে লামার্কের অবদান যথেষ্ট। জীববিবর্তন সম্বন্ধে তিনি তার মতামত ব্যক্ত করেন ১৮০৬ খিস্টাব্দে, তার বিখ্যাত 'Philosophic Zoologique' ' নামক গ্রন্থে। আমাদের দেশের মাওলানারা ডারউইনের নাম যতটা জানেন, লামার্কের নাম তা জানেন না। জানলে নিশ্চয় তারা তারও সমালোচনা করতেন। ডারউইন নন, জঁ ব্যাপতিস লামার্ক(১৭৪৪-১৮২৯) প্রথম জীববিবর্তনবাদকে জীববিদ্যার ক্ষেত্রে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। চার্লস ডারউইনের অনেক আগেই জন্মেছিলেন তিনি। আমাদের এবং অন্যান্য প্রাণীদের দেহে এমন অনেক অঙ্গ আছে, যা এক সময় কাজে লাগত, কিন্তু এখন আর লাগে না। ডারউইন, এরা কেন আছে তা ব্যাখ্যা করতে পারেননি। কারণ জীবন সংগ্রামে তারা আর কাজে আসে না। কিন্তু লামার্কবাদের সাহায্যে এদের ব্যাখ্যা করা যায়। বলা যায়, এরা হলো অতীতের সাক্ষী। অব্যবহারের ফলে বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়েছে। বিবর্তনবাদ আর ডারউইনবাদ সমার্থক নয়। ডারউইনকে ভুল প্রমাণ করতে পারলেই যে বিবর্তনবাদ অসত্য হয়ে যায়, তা নয়। ডারউইন জীব বিবর্তনবাদের জনক নন। যদিও আমরা সাধারণত তাকেই এ ব্যাপারে ভুলবশত প্রদান করে থাকি সকল কৃতিত্ব। পক্ষান্তরে ডারউইনকে কেন্দ্র করে যে রকম সমরবাদী মনোভাবের উদ্ভব হতে পেরেছে, লামার্ককে ঘিরে তা হতে পারে না। লামার্কের মতে, চেষ্টার মাধ্যমে প্রাণীরা বদলাতে পারে, যদি চেষ্টা করবার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। এই দর্শন ডারউইনের তুলনায় অনেক বেশি সামাজিক মূল্যবহ। মানুষের মধ্যে যে মানব সমষ্টি পিছিয়ে আছে, তারা যে জন্মগত কারণেই পিছিয়ে আছে তা নয়। তাদের অনগ্রসরতার কারণ হলো কর্মগত। কর্মের মাধ্যমে তারাও আপন উন্নয়ন ঘটাতে পারে। সংগ্রাম আর জীবন যুদ্ধের রূপকল্প (Metaphor) লামার্ক কোথাও ব্যবহার করেননি। ডারউইন করেছেন যা এক সময় জুগিয়েছে সাম্রাজ্য বিস্তারের এবং সাম্রাজ্য ধরে রাখার যুক্তি। রক্ত ঝরাবার যুক্তি। হিংস্রতা বৃদ্ধির যুক্তি।
১৬ জানুয়ারি, ২০০০ খ্রি.