Sunday 26 December 2021

জিন্নাহ পাকিস্তান নতুন ভাবনা

 আজ কায়েদে আযম মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর জন্মদিন ।


তিনি২৫ ডিসেম্বর ১৮৭৬  সালে করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন । জিন্নাহ  ছিলেন একজন আইনজীবী, রাজনীতিবিদ ও পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৩ সাল থেকে শুরু করে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের স্বাধীনতা পর্যন্ত জিন্নাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন এবং আমৃত্যু এই পদে বহাল থাকেন। পাকিস্তানে তাকে কায়েদে আজম (মহান নেতা) ও বাবায়ে কওম (জাতির পিতা) হিসেবে সম্মান করা হয়। । ১৯৩০ সালে এলাহাবাদে মুসলিম লীগের অধিবেশনে প্রদত্ত ভাষণে স্যার মুহাম্মদ ইকবাল ভারতে একটি মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের ডাক দেন। চৌধুরী রহমত আলি ১৯৩৩ সালে একটি পুস্তিকায় সিন্ধু অববাহিকায় ও ভারতের মুসলিম অধ্যুষিত অন্যান্য স্থানে মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানান। ১৯৩৬ ও ১৯৩৭ সালে জিন্নাহ ও ইকবাল মতবিনিময় করেন। পরের বছরগুলোতে জিন্নাহ ইকবালের ধারণাকে গ্রহণ করেন। জিন্নাহর আশঙ্কা ছিল যে ব্রিটিশরা ভারত থেকে চলে যাওয়ার পর কংগ্রেস প্রধান আইনসভায় মুসলিমরা তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হবে।


গান্ধী না থাকলেও ভারত একদিন না একদিন স্বাধীন হতো। কিন্তু জিন্না না থাকলে পাকিস্তান কি আদৌ সম্ভব হতো ? ভারতকে স্বাধীন করার দাবীদার আরো একজন কি দু'জনের নাম শোনা যায় , কিন্তু পাকিস্তানকে স্বতন্ত্র করার দাবীদার আর একজনও নেই।  লা শরিক জিন্নাহ।  যেমন লা শরিক আল্লাহ।  ---- 

অন্নদাশংকর রায় 

ভূমিকা,

জিন্না /পাকিস্তান , নতুন ভাবনা ,

লেখকঃ শৈলেশকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় 

মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স 

কলকাতা


ডক্টর এবনে গোলাম সামাদ লিখেছিলেন:বর্তমান বাংলাদেশের উদ্ভব হয়েছে সাবেক পাকিস্তান ভেঙে । পাকিস্তান না হলে বাংলাদেশ হতে পারত না । 

(বাংলাদেশ:সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি প্রতিক্রিয়া,পৃষ্ঠা৫০)


সৌমিত্র দস্তিদার লিখেছিলেন:জিন্নাহ চেয়েছিলেন কংগ্রেস পিছিয়ে পড়া মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য শিক্ষা, সরকারি চাকরি ও রাজনীতিতে সামান্য কিছু জায়গা ছেড়ে দেবে। আকুল জিন্নাহ প্রশ্ন তুলেছিলেন– গরিষ্ঠ কি লঘিষ্ঠকে কিছু দিতে পারে না? বিনা যুদ্ধে যে সূচাগ্র মাটিও হিন্দুত্ববাদীরা দেবে না, জিন্নাহ তা বড় দেরিতে বুঝলেন। কংগ্রেসের প্রতি, তথাকথিত জাতীয়তাবাদীদের ওপর অনেক আস্থা ছিল জিন্নাহ-র। বিশ্বাসভঙ্গের যন্ত্রণায় কাতর জিন্নাহ দেশ ও রাজনীতি ছেড়েই চলে গেলেন বিদেশ। বহুবছর পর ফিরলেন এক্কেবারে অন‍্য জিন্নাহ হয়ে।


সমাজবিজ্ঞানের এক সাধারণ ছাত্র হিসেবে এটুকু বুঝি যে আজকের মনুবাদী রাজনীতির প্রবল দাপটের সূচনাপর্ব সেই বিশ শতকের গোড়ায়। ভারতীয় রাজনীতিতে সন্ধিক্ষণ বা ক্ষমতার বৃত্ত থেকে মুসলিম বিতাড়নের সূচনা ১৯২৮-এ। জিন্নাহ উপলক্ষ মাত্র। তাঁর ১৪ দফা প্রত‍্যাখ‍্যান একসঙ্গে অনেক বার্তা দিল দেশের জনসাধারণ ও বৃটিশ প্রভুদেরও। নিমেষে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল হিন্দু-মুসলিম ঐক‍্যের মিথ ও সম্ভাবনা। জিন্নাহর প্রস্তাবিত ১৪ দফার অন‍্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। অপরদিকে কংগ্রেস ও তার ভিতরে থাকা দক্ষিণপন্থীদের দাবি ছিল অতিকেন্দ্রায়ণ। এখন শাসকবিরোধী জোটরাজনীতির যে কেন্দ্র-রাজ‍্য সম্পর্কের পুনর্মূল‍্যায়নের স্লোগান, সেটি সর্বপ্রথম তুলেছিলেন মহম্মদ আলি জিন্নাহই। এ দাবির পিছনে নিশ্চয়ই কোনও সাম্প্রদায়িক অভিসন্ধি ছিল না। পাঠক, মনে রাখবেন যে ১৯২৮ সালে ধর্মীয় মেরুকরণ যখন স্পষ্ট হচ্ছে তার তিনবছর আগে ১৯২৫-এ জন্ম নিয়েছে আরএসএস বা রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ।


জন্মলগ্ন থেকেই আরএসএস ‘হিন্দু ভারত’-এর ডাক দিয়েছিল। ফলে মুসলিমদের একছটাক জমি দিতেও তারা নারাজ ছিল। কংগ্রেসের মধ্যে প্রগতি-প্রতিক্রিয়ার লড়াই তখনও জারি ছিল। আজও যেমন আছে। বস্তুত ১৯০৫-এ বঙ্গভঙ্গ রদের সময় থেকে যে স্বাধীনতার সংগ্রামের সূচনা তা ক্রমেই হিন্দুত্ববাদীদের হাতে চলে গেল। অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর ও আরও অন‍্যান‍্য গোষ্ঠীর বিপ্লবীদের কর্মধারা গভীরভাবে লক্ষ করলেই তা বোঝা যায়।