Friday 26 February 2016

লন্ডনে সিটিজেন মুভমেন্টের জাতীয় সেমিনার : পিলখানার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মূলক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রহীন করার পরিকল্পনা শুধু



মুহাম্মদ নূরে আলম বরষণ লন্ডন থেকে
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সেনা হত্যাকান্ডের নেপথ্যের পরিকল্পনাকারীদের বিচার দাবি করেছেন, বৃটেনে বসবাসরত বাংলাদেশী সাবেক সেনা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীরা আইনজীবীরা নাগরিক আন্দোলনে বক্তারা বলেন, পিলখানার পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মূলক হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশকে গণতন্ত্রহীন করার পরিকল্পনা শুধু হয় এতে করে দেশ দিন দিন গভীর সংকট নিরাপত্তার হুমকির মুখে পড়ছে
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় লন্ডনের ওয়াটার লিলি মিলনায়তনে সিটিজেন মুভমেন্টের বা নাগরিক আন্দোলনের উদ্যোগে আয়োজিতপিলখানা হত্যাকান্ড: বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্রশীর্ষক জাতীয় সেমিনারে বিশিষ্টজনরা এই দাবী জানানোর পাশাপাশি এইসব কথা বলেন বক্তরা বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে পঙ্গু করতেই পিলখানায় সুক্ষ্ম কৌশলে সেনা হত্যাকান্ড চালানো হয় দুনিয়ার কোন যুদ্ধে এক সাথে এত সেনা কর্মকর্তা নিহত হওয়ার নজির নেই
অথচ অত্যন্ত ঠান্ডা মাথায় সুপারিকল্পিতভাবে পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে সেনা সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আক্রান্ত হওয়ার পর বিডিআর ডিজি শাকিল আহমদ কর্ণেল গুলজার বিভিন্ন জনকে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন এমনকি সেনা প্রধান এবং সরকার প্রধানের কাছেও তারা ফোন করেছিলেন তাদের উদ্ধারের জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন কিন্তু কেন সময় ক্ষেপন করে নিহতের তালিকা দীর্ঘ করা হল এর রহস্য একদিন উদঘাটন করতে হবে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা আলোচনার নামে কালক্ষেপন করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী দেশ প্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়
আলোচনা সভায় সেনা হত্যাকান্ডের ওপর নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল ভিডিও চিত্র প্রদর্শণ করা হয় অনুষ্ঠানে দর্শক সারিতে বসে সকল বক্তার আলোচনা তিনি মন দিয়ে শুনেছিলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরে তিনি সকলের অনুরোধে পাঁচ মিনিটের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন
সিটিজেন মুভমেন্টের বা নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক এমএ মালেকের সভাপতিত্বে এবং মনোয়ার বদরুদ্দোজার পরিচালনায় বক্তৃতা করেন, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক . কামরুল হাসান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর এম আহমদ, সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক, মেজর অব. জহির উদ্দিন, মেজর অব. এবি সিদ্দিক, মেজর অব. আশফাক, মেজর অব. শাহ আলম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপ ইউকের প্রধান প্রতিনিধি ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা, জাস্ট নিউজের সম্পাদক মুসফিকুল ফাইজাল আনসারী, সিনিয়র সাংবাদিক কেএম আবু তাহের, সিটিজেন মুভমেন্টের মিডিয়া কোর্ডিনেটর মুহাম্মদ নূরে আলম বরষণ, আমার দেশ পত্রিকার সহাকারী সম্পাদক মাহবুব আলী খানশূর, সাংবাদিক জাহিদ গাজী, সাংবাদিক আশিক মাহমুদ, টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলর মাহবুব আলম, সাবেক ছাত্রনেতা পারভেজ মল্লিক, এস এম মাহাবুব রহমান, হাসিবুল হাসান, শারফরাজ আহমেদ শরফু, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন মুফতি শাহ সদরুদ্দীন কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা শামীম এছাড়াও যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, আমি শ্রদ্ধার সাথে সরণ করছি পিলখানায় নিহত শহীদ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ অন্যান্য নিহত সৈনিকদের সেইসাথে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি নিহত সেনা অফিসারদের পরিবারের স্বজনের প্রতি তারেক রহমান সেমিনারের ব্যানারে লেখা তিনটি শব্দের বিশ্লেষণ করে বলেন, রাষ্ট্র যখন থাকে তখন জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যতে বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থাকতেই পারেন? দ্বিতীয়টি হলো নিরাপত্তা, কিছু দিন আগে বৃটেনের সরকার তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ সফর করতে নিষেধ করেছে ? এতেই বুঝা যায় বাংলাদেশের নিরাপত্তার কত নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে আর তৃতীয় যেটা হলো সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আপনারা হয়তো একমত নাও হতে পারে কিন্তু ৭১ সালে জনগণকে সাথে নিয়ে এই সেনারাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে সার্বভৌমত্বকে ছিনিয়ে এনেছিলাম ৫৭ সেনা অফিসারদের হত্যার মাধ্যমে কি মেসেজ দেয়া হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে আমি বলতে চাই যে সেনা দেশের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার শপথ নিয়েছে তাদেরকেই আবারও এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রফেসর . কামরুল হাসান বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল পরিকল্পিত এটা আওয়ামী লীগের নীলনকশার অংশ হিসেবে দেশ জাতিকে নিরাপত্তাহীন করে সংকটে পতিত করার এই বর্বর হত্যাকান্ড ঘটানো হয় ঘটনার মাধ্যমে সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছে আমরা দাবী করবো, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জড়িতদের চিহ্নিত করে যথাযথ বিচার করা হবে
বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান বলেন, যারা এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের শাস্তি দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে পিলখানা হত্যাকান্ডের সাত বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও কেন সেনাবাহিনীর তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি?
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ইউরোপ ইউকের প্রধান প্রতিনিধি ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লা বলেন, আমরা প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয় বিডিআর হত্যাকান্ডের যে তথ্য প্রমাণ আছে তা দিয়ে আবারও নতুন প্রকৃত খুনীদের বিচারের আওতায় আনা হবে এই বর্বর হত্যাযজ্ঞের অবশ্যই বিচার আমরা করবো
জাস্ট নিউজের সম্পাদক মুসফিকুল ফাইজাল আনসারী বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ড বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, এটি পরিকল্পিত বড় ষড়যন্ত্রের একটি অংশ অবৈধ সরকার সময় ক্ষেপণ করার নামে সেনা অফিসারদের হত্যা করে বাংলাদেশকে ব্যর্থ দুর্বল করার জন্য ষড়যন্ত্রকারীরা বিডিআরকে ধ্বংস আর সেনাবাহিনীর সদস্যদের মনোবল ভাঙার জন্য এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে আর সেই ষড়যন্ত্র শুরু হয় /১১ থেকে আর পাকা হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে
সিনিয়র সাংবাদিক কেএম আবু তাহের বলেন, রাজনৈতিক কূটচালের অংশ হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছিল বিদ্রোহে অংশ নেয়া জওয়ানরা শুধু বিদ্রোহী নয়, তারা আওয়ামী লীগের এজেন্ট হয়ে এই হত্যায় অংশ নেয়
সেনা হত্যাকান্ডের ওপর নির্মিত একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল ভিডিও চিত্রে বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ বলেন, আমার বাবা-মা সহ দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্তি পাব না স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাব না আমরা সবাই জানি, কে বা কারা এই হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী এবং কারা জড়িত দুনিয়ায় কোনদিন এর বিচার না পেলেও আখেরাতে বিচার পাব
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. এবি সিদ্দিক বলেন, কিছু প্রশ্নের জবাব- প্রমাণ করে দেয়, পিলখানা হত্যাকান্ডে কে বা কারা জড়িত সেদিন প্রধানমন্ত্রী ডিএডি তৌহিদের সঙ্গে কেন দীর্ঘ বৈঠক করলেন? কেন তাকে শেরাটন থেকে খাবার এনে খাওয়ালেন? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হবে দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. জহির উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের সেনা বাহিনী বহি:শত্রুর হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে যেমন ভুমিকা রাখে, তেমনি দেশের ভেতরেও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভুমিকায় ছিল পিলখানা হত্যার মাধ্যমে এই দুই অবস্থান থেকেই সেনা বাহিনীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে আমরা এই দিবসকে জাতীয় শোক দিবস পালন করতে পারি নাই অজ্ঞাত কারণে ক্রিকেট খেলা দিয়ে বিডিআর হত্যা দিবসের দিনে সরকার চাইছে মুছে ফেলতে
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের জন্য কেবল বাইরের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করলে চলবে না এই হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী জেনেও কেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হলো না - প্রশ্ন তোলেন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা
সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর অব. শাহ আলম বলেন, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর যেসব কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন, তার দায়ভার সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিতে হবে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করার আহ্বান জানান তিনি
মেজর অব. আশফাক বলেন, শেখ হাসিনার একদলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার পূর্বপরিকল্পনা হিসেবে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব চিরতরে বিনষ্ট করতে পিলখানা হত্যাকান্ড ঘটানো হয় বাংলাদেশের মানুষ আজ তা পুনরুদ্ধারের লড়াই করছে
সভাপতির বক্তব্যে সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এমএ মালেক বলেন, এই বর্বর হত্যা বিচার দাবি করছি আগামী দিনে আমরা ক্ষমতা গেলে অবশ্যই বিচার করবো

Thursday 25 February 2016

মাহফুজ আনামকে কি ছেড়ে দেয়া যায়না ??


মাহফুজ আনামকে কি ছেড়ে দেয়া যায়না ??

সূফি বরষণ
 সাবেক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েমাইনাস টু ফর্মুলা মাধ্যমে তাকে বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রের সঙ্গে দুই পত্রিকার সম্পাদক জড়িত ছিলেন কিনা বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণে বারবার মিথ্যা সংবাদ ছেপেছেন অভিযোগ করে এখন ভুল স্বীকার করায় তাকে সাংবাদিকতা ছেড়ে দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন তিনি
শেখ হাসিনা বলেন, দুটি পত্রিকা ডিজিএফআইয়ের লিখে দেয়া মিথ্যা সংবাদ ছাপিয়ে সে সময় রাজনীতি থেকে আমাকে এবং বেগম খালেদা জিয়াকে চিরদিনের জন্য সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালিয়েছে আর ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম দুর্নীতিবাজ বানানোর জন্য রাজনীতিবিদদের বহুচেষ্টা করেছিলেন তিনি স্বীকারও করেছেন, ডিজিএফআইয়ের চাপে তিনি সে সব নিউজ ছেপেছিলেন এখন ভুল স্বীকার করায় তাই তার পদত্যাগ করে সাংবাদিকতা থেকে সরে আসা উচিত ২০ বছর ধরে ওই দুটি পত্রিকা তার বিরুদ্ধে মিথ্যা লিখেই চলেছে বলেও অভিযোগ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা সূত্র: ভোরের কাগজ, মঙ্গলবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
একদিকে একের পর এক ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে মামলার মিছিল সমর্থনযোগ্য নয় তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো বিএনপি যেভাবে মাহফুজ আনামের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, সেটা অতি উৎসাহ বললেও বেশি হবে মনে করি না গত ১১ ফেব্রুয়ারী ডেইলি স্টার নিজেই স্বীকার করেছে জরুরী আইনের আমলে ২০০৭ সালের জুন জুলাই মাসে মোট ১১টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল ডিজিএফআই-এর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ১১টি প্রতিবেদনের মধ্যে ৩টি ছিল শেখা হাসিনা তাঁর পরিবারকে নিয়ে আর বাকী ৭টি রিপোর্ট ছিল বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান কোকোকে নিয়ে আর একটা ছিল তৎকালীন বনের রাজা হিসেবে খ্যাতিপ্রাপ্ত ওসমান গনিকে কেন্দ্র করে
মাত্র ৩টা রিপোর্টের ঠেলা সামলাইতে এখন হিমশিম খেতে হচ্ছে জনাব সিনিয়র সাংবাদিক মাহফুজ আনাম বাকী ৭টা যাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ করা হয়েছিল তারা নির্বোধের মত মাহফুজ আনামের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করছেন তাহলে আমরা কি ধরে নেব, ডেইলি স্টারের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডিজিএফআই-এর দেয়া বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং আরাফাত রহমান কোকোর সম্পর্কে প্রকাশিত ৭টি প্রতিবেদন বিএনপি কবুল করে নিয়েছে! আর এটা হলে কি আবারও বিএনপি বুদ্ধিভিত্তিক জাতীয় রাজনীতিতে প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান হয়ে দাঁড়ায় না??
মাহফুজ আনাম কিন্তু তখন শুধু ডিজিএফআই-এর দেয়া তথ্য প্রকাশ করেনি নীতি বিবর্জিত কাজ করেছিলেন পত্রিকার সম্পাদনার সীমা অতিক্রম করে তিনি নিজেকে সরকার বসানোর কারিগর হিসাবে দাবী করেছিলেন মাহফুজ আনাম নিজেই ২০০৭ সালের ১৪ জানুয়ারী দাবী করেছিলেন জরুরী আইনের সরকার তিনি এনেছেন জরুরী আইনের মূল এজেন্ডা কি ছিল বিএনপি মনে হচ্ছে এখনও টের পায়নি!! তাই তারা মাহফুজ আনামের পক্ষে নিয়ে সাফাই গাওয়ার প্রশ্নবিদ্ধ চেষ্টায় লিপ্ত
সরকারের অন্যায়ের পাশাপাশি মাহফুজ আনামের তখনকার ভুমিকাও বিএনপি আলোচনায় আসা উচিত আর তাঁকে স্মরণ করিয়ে দেয়া উচিত যে মাহফুজ আনাম অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে সেইসময় একজন সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘জরুরী আইনের বিরুদ্ধে কথা বলার আপনি কে? আমরাই এই জরুরী সেনা সরকারকে এনেছি জরুরী আইনের সরকারকে সাপোর্ট দেয়ার নিমিত্তে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজিত অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন তিনি ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের ভুল স্বীকার নিয়ে একটি খবর পড়লাম কয়েকটি অনলাইন নিউজ পোর্টালে আর টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজে মুন্নী সাহার সঞ্চালনায় গত বুধবার রাতে এক আলোচনায় তিনি বলেছেন, “ডিজিএফআইয়ের দেওয়া ভিত্তিহীন খবর যাচাই না করে ছাপাটা সাংবাদিকতারভুল
তার সরল স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী সম্পর্কিত খবর তাকে কতটুকু উপরে তুলেছে কিংবা কতটুকু নিচে নামিয়েছে সেটা বলতে পারব না খবর পড়ার পর কেউ তাকে বাহবা দিতে পারেন আবার কেউ তাকে ঘৃণাও করতে পারেনআমি দুটোর কোনোটাই করব না তবে আমি শুরু কথা বলতে চাই যে তাঁর এই বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহীতায় পড়ে কি না আর তখন যদি এই মাহফুজ আনামরা অবৈধ সেনা সরকারের পক্ষে দালালী করতে পারে!? তাইলে এখন যে দেশে অবৈধ অনির্বাচিত সরকার বিনা ভোটে ক্ষমতা জবরদখল করে আছে আর মিস্টার আনামকে অসংখ্য মামলা এবং হুমকি দিয়ে কোণঠাসা করে রাখছে? তো এখন মিস্টার আনাম আপনি সর্ব মোট কয়টি জরুরী সেনা সরকার চাইবেন?? নাকি দালালী করতে করতে নিজের নৈতিক সৎ সাহস হারিয়ে ফেলেছেন??
অভিশপ্ত /১১ এর মাধ্যমে জেনারেল মঈন আহমদ এবং ফখরুদ্দিন আহমদরা ক্ষমতায় বসার মাত্র চারদিনের মাথায় অর্থাৎ ১৫ জানুয়ারি সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিকদের এক বৈঠক হয়েছিল সচিবালয়ে   বৈঠকটি ডেকেছিলেন তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে জরুরি অবস্থার মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায় তার একটা উপায় বের করা একমাত্র মরহুম মুসা ভাই ছাড়া ওই বৈঠকে উপস্থিত সবাই এখনও বেঁচে আছেন দৃশ্যত দেখে আমাদের মনে হয়েছিল মাহফুজ আনামের সঞ্চালনায় বৈঠকটি চলছিল
সে সময় এক সাংবাদিকের বলেছিলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা চাইলে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করতে হবে অমনি হুংকার দিয়ে উঠলেন মাহফুজ আনাম বললেন, “হু আর ইউ টু স্পিক এগেনিস্ট দ্য ইর্মাজেন্সি? উই হ্যাভ ব্রট ইর্মাজেন্সি(জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে কথা বলার আপনি কে? আমরাই জরুরি অবস্থা এনেছি) মাহফুজ আনামের সেই বক্তব্য দেশের সব টিভি চ্যানেল পরের দিন পত্রিকায় প্রচারিত হয় এখন সারা বাংলাদেশে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে মাহফুজ আনামের ডেইলি স্টারের বিতর্কিত গণতন্ত্র বিরোধী ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম নিজের বক্তব্যের স্বপক্ষে ২০০৭ সালের এপ্রিল সেনাবাহিনী প্রধানের পক্ষে সাফাই গেয়ে লেখা একটি কলামটির অংশ বিশেষ এখানে তুলে ধরলাম কলামটি হলো :
সেনাবাহিনী প্রধান মঈন ইউ আহমেদ যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি রাজনীতির বিষয়সমূহ নিয়ে জনসম্মুখে কথা বলবেন তখন অবশ্যই তার নিজের মতামতের ওপর বিতর্ক, সমালোচনা গ্রহণের জন্যও প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন শুরু করা যেতে পারে রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে সেনাপ্রধানের দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে দেয়া বক্তব্য নিয়ে একজন সেনাপ্রধান কি তার পদে থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দিতে পারেন? এধরনের বক্তব্য স্বভাবতই জনগণের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে যে সেনাপ্রধান কিংবা তার বাহিনী কি দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হতে চান? তিনি যখন দেশের ভবিষ্যৎ সরকারের কাঠামো কিংবা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে কথা বলেন তখন জনমনে সে প্রশ্ন আরো তীব্র হয় কাজেই সেনাপ্রধানের বক্তব্য থেকে আমরা কী বুঝবো? এটা কি শুধুমাত্রই বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা নাকি জনগণের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য দেয়া ইচ্ছাকৃত কোন বার্তা? উভয় ক্ষেত্রেই কিন্তু তার তোলা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বিশদ আলোচনা এবং প্রকাশ্য বিতর্কের দাবি রাখে
আমরা বিশ্বাস করি চলমান সংস্কারের আলোচ্য বিষয় হিসেবে দেশের ভবিষ্যৎ, রাজনীতি, সরকার, রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন গুরূত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে ধরনের নীতিগত বক্তব্য আসা উচিৎ সেনা সমর্থিত সরকারের প্রধানের কাছ থেকে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে এলে এমন প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক যে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং তাদের সবচেয়ে বড় সমর্থক সেনাবাহিনীর মধ্যে কি তবে মতপার্থক্য কাজ করছে? পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে যখন প্রধান উপদেষ্টার অনুপস্থিতিতে এমন বক্তব্য দেয়া হয়, যিনি বর্তমানে সরকারপ্রধান হিসেবে তার প্রথম বিদেশ সফরে রয়েছেন
এখন পর্যন্ত পর্দার আড়ালে থেকেই সেনাবাহিনী বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিল কিন্তু সেনাপ্রধানের বক্তব্য পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে তার বক্তব্য জাতি এবং বিশ্বকে জানান দিচ্ছে প্রকৃতপক্ষে কার দ্বারা সরকার পরিচালিত হচ্ছে বিষয়টি প্রকাশ্যে এনে কার স্বার্থ সিদ্ধি হলো রাষ্ট্রের না সেনাবাহিনীর? এখন থেকে ভালো কিংবা মন্দ সকল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের দায়ভার বর্তাবে সেনাবাহিনীর কাঁধেই তারা এখন সকল প্রকার প্রকাশ্য ঝুঁকির মুখেই দাঁড়িয়ে সেনাপ্রধানেরআমাদের নিজস্ব গণতন্ত্র ধারণা আমাদের মনে করিয়ে দিচ্ছে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান আমলে জেনারেল আইয়ুব খানেরগণতন্ত্রের সংজ্ঞা বদলে দেবার কথাযার পরিসমাপ্তিতে ছিল তারমৌলিক গণতন্ত্র যা আমাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারপরও বলছি সাংবাদিক মাহফুজ আনাম নৈতিক অধঃপতনের কারণেই হোক, ভয়ে হোক, আর রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ক্ষোভের কারণেই হোক তিনি তাঁর অপরাধ স্বীকার করেছেন তাই আমি বলতে চাই মাহফুজ আনামকে কি ছেড়ে দেয়া যায়না ?? তা না হলে বর্তমান অবৈধ সরকারের সব অপকর্মের সমর্থনকারী অন্যান্য সাংবাদিকগণও মাহফুজ আনামের পরিণতির শিকার হওয়ার ভয়ে আর কোনোদিন নিজেদের ভুল স্বীকার করবে না?!

মুক্তবুদ্ধি চর্চা কেন্দ্র থেকে
সূফি বরষণ